শামীমুল ইসলাম ফয়সাল ::
রোহিঙ্গা জামাল উদ্দিন, মিয়ানমারের মংডুতে বসবাস ছিলো তাঁর, ২০১২ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে, এরপর কিছুদিন উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পে এক আত্মীয়ের বাসায়
বসবাস করেন, সেখানে নানা জটিলতায় তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে আর নিবন্ধিত হতে পারেননি।
এরপর জামাল উদ্দিন তাঁর পরিবারসহ চট্টগ্রামে চলে যান, সেখানে দীর্ঘদিন ভাড়া বাসায় থাকার পর আবারো উখিয়ার কুতুপালংয়ে ফিরে আসেন, এরপর কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের ( রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প রোডের মাথা)
সড়কের পাশে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেন।
কিন্তু এই জামাল উদ্দিন এখন পরিচয় দেন জাফর আলম নামে, কারণ তিনি বাংলাদেশী ভোটার হয়েছেন জাফর আলম নামে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা জামাল উদ্দিন ওরফে জাফরের এনআইডিতে ঠিকানা লেখা হয়েছে চট্টগ্রামের চকবাজারের কে.বি আমান আলী রোডের ১৫৭২ নাম্বার বাসা।কিন্তু বাস্তবে ওই ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
রোহিঙ্গা জামালের এনআইডি নং হলো -২৮৪৫০১০০৭৯, অন্যদিকে জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ৫ এপ্রিল ১৯৭২, পিতার নাম আব্দু সাফি ও মাতার নাম লেখা হয়েছে গুল বাহার।
এদিকে রোহিঙ্গা জামাল ওরফে জাফর আলম উখিয়ার হাজম রোড এলাকায় বনবিভাগের জমিতে তৈরি করেছেন বসতভিটা, হাজমরোডে বনবিভাগের প্রায় ১৪ শতক জমিতে টিনশিডের ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস করেন পরিবাসহ।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, বনবিভাগের ওই জমিটি বিক্রি করেছেন রাজাপালংয়ের ৪ নং ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের দিলশাদ বেগম নামে এক নারী, স্টাম্পপত্রে জমির মূল্য লেখা হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে জমিটা জাফর আলম কিনেছেন ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আরও জানান, রোহিঙ্গা জাফরের বিষয়ে ইউএনওর সাথে আলাপ করে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে বনের জমিটি উদ্ধার করা হবে।
এদিকে অভিযুক্ত জাফর আলম তাঁর ঠিকানা জানতে চাইলে কক্সবাজারের পাহাড়তলীতে তাঁর বাড়ি বললেও কোন জায়গায় সেটি আর বলতে চাননা তিনি।
তবে তিনি রোহিঙ্গা সেটি নিজে সরাসরি স্বীকার না করলেও তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করলে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে শুধু জাফর আলম নয় আরো অনেক নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে এখন বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের আব্দুর রহমান নিজের সন্তানদের নাম পরিচয় গোপন করে সন্তানদের জন্য জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয়দের অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গারা নানাভাবে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে, তাছাড়া অনেক বিত্তবান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে বাসাভাড়া নিয়ে থাকেন, অনেকেই বনের জমিও ক্রয় করেছেন।তাতে রোহিঙ্গাদের মাঝে নিজ দেশে ফিরে যেতে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।তাই সরকারকে এ বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন রবিউল হোসাইন।
উখিয়ার কুতুপালং, হাজমরোড এলাকা, থাইংখালীর মরা আমগাছতলা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গারা বনের জমি কিনে তৈরি করেছে স্থায়ী আবাস।সম্প্রতি র্যাব-১৫ উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে রোহিঙ্গাদেরকে ঘরভাড়া দেওয়া বাংলাদেশি মালিক এবং ভাড়া বাসায় থাকায় রোহিঙ্গাদেরকে আটক করেছে।