ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩১/০৫/২০২৩ ৬:২২ এএম , আপডেট: ৩১/০৫/২০২৩ ৬:৪৪ এএম

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি সহায়তা কমছে হুহু করে। কমতে কমতে এখন এ তহবিল পৌঁছেছে তলানিতে। তহবিল এতটাই কমেছে যে, রোহিঙ্গাদের এতদিন ধরে নিয়মিত খাদ্যসহায়তা দেওয়া জাতিসংঘ সংস্থা এখন অর্থের সংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তায়। প্রতি বেলার খাবারের জন্য বরাদ্দ ইতোমধ্যে কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

বিশ্ব সংস্থাটির মতে, সামনের দিনগুলোয় খাদ্যসহায়তায় আরও ঘাটতি আসন্ন। ফলে রোহিঙ্গারা এখন মুখোমুখি কঠিন বাস্তবতার।
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তহবিল ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি তাদের খাদ্য ভাউচারের পরিমাণ কমিয়ে মাত্র ৮ মার্কিন ডলারে (আনুমানিক ৮৬০ টাকা) নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে, যা প্রতি বেলার খাবারপ্রতি মাত্র ৯ সেন্ট (আনুমানিক ১০ টাকা)। সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবেই এ তহবিল ঘাটতিতে পড়েছে রোহিঙ্গারা।

ইতোমধ্যে এ বছরের মার্চে তহবিল ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি খাদ্য ভাউচারের অর্থ জনপ্রতি প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে ১০ ডলারে কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। সাইক্লোন মোখায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা তাদের বাসস্থান হারানোর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই আরও একবার তহবিল ঘাটতির ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেল্লি বলেন, জনপ্রতি সহায়তার পরিমাণ ১২ মার্কিন ডলারের কম হলে তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পুষ্টি এবং ক্যাম্পে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তা বিপত্তি ডেকে আনে।

আমরা জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার জন্য আবেদন করছি, যেন যত দ্রুত সম্ভব আগের মতো সম্পূর্ণ পরিমাণে রেশন দেওয়া যায়। স্কালপেল্লি বলেন, ডব্লিউএফপির খাদ্যসহায়তা রোহিঙ্গাদের কাছে খাদ্যের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সব অবদানের জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, কিন্তু এখনো আমাদের ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল দরকার, যেন এ বছরের শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পূর্ণমাত্রায় রেশন দেওয়া যায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে যাওয়া জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ওলিভিয়ার ডি শুটার বলেছেন, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতই কম অবদান রেখেছে যে, চাহিদার শতকরা মাত্র ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। এটি অত্যন্ত ‘অনভিপ্রেত’।
এ কারণেই বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচার কমিয়ে দিতে হয়েছে। এতে অপুষ্টি এবং যথেষ্ট পুষ্টির অভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। ডব্লিউএফপির মতে, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার যেহেতু জীবিকার কোনো সুযোগ নেই, তাই তাদের সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে ক্যাম্পে থাকতে হচ্ছে। এমনকি ডব্লিউএফপির খাদ্যসহায়তা পাওয়ার পরও ১২ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছিল। এখন খাবারের ঘাটতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরণার্থীদের কাছে নেতিবাচক পদ্ধতি অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প নেই। শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা মেয়েদের বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। রোহিঙ্গারা অবৈধ কর্মসংস্থানের সন্ধান করলে তার ফলে তারা শোষণ ও অপব্যবহারের উচ্চঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে এবং রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে। যারা সমুদ্রপথে অন্যত্র যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে, তারা বিপজ্জনক যাত্রা ও অনিশ্চিত ভাগ্যের মুখোমুখি হতে পারে। সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানান, মানবিক বিচারে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশ সরকার এখন শরণার্থীর বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে চাইছে। মানবিক বিবেচনায় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও শিবিরে রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। প্রায়ই ক্যাম্পে গোলাগুলিসহ সংঘর্ষ চলছে। ক্যাম্পের বাইরে ইয়াবা পাচার, চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণই নিজভূমে পরবাসীর মতো দিনযাপন করছে। রোহিঙ্গা শ্রমিকরা অল্প মজুরিতে কাজ করায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজের সুযোগ হারাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এতদিন যারা রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল দিত, তারা টাকা-পয়সা কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে অনেক বেশি কমিয়ে দিয়েছে। যেমন, আগে যুক্তরাজ্য ১২৬ মিলিয়ন (১২ কোটি ৬০ লাখ) মার্কিন ডলার দিত, কিন্তু এ বছরে তারা ৫.৪ মিলিয়ন (৫৪ লাখ) ডলার দিয়েছে। আমাদের দেননি, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারকে দিয়েছে। এখন প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের পেছনে ১.৯ বিলিয়ন (১৯০ কোটি) মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে আমাদের। এ ছাড়াও অবকাঠামো বানাতে হয়েছে তাদের জন্য। সবমিলিয়ে আমরা চাই, তারা ফেরত যাক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের চেয়ে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। তারা স্থানীয়দের চাকরি-বাকরি নিয়ে নিচ্ছে। কয়েকদিন পর স্থানীয় মানুষজন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠবে।
বিডি প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...