প্রকাশিত: ০৫/১২/২০২১ ৬:১২ পিএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এই অঞ্চলের মানবিক বিপর্যয় এড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, তাঁদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ রোববার বিশ্বশান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি, এর মধ্য দিয়ে শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানবজাতির গভীরতম আকাঙ্ক্ষাসমূহ অনুধাবন করেছি। বরাবরের মতো ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে আমাদের অবিচল সমর্থন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ১১ লাখের অধিক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। ফলে এই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।’

গত দুবছর ধরে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্ব ব্যবস্থাকে নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই সংকট প্রমাণ করেছে আমরা কেউই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বের এই চরম সংকটময় সময়ে আমি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা সর্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করার আহ্বান জানাই। আসুন, আমরা সর্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কর্মযজ্ঞে নেমে পরি।

জাতির পিতার শান্তির দর্শন ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এবং স্থায়ী শান্তি চেতনার প্রশস্ত মহাসড়ক। তিনি প্রমাণ করেছেন সকল বঞ্চনা-বৈষম্য-শোষণের শৃঙ্খল তথা পরাধীনতা থেকে মুক্তি এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যের অবসানপূর্বক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমেই তা নির্মাণ করা সম্ভব। তা ছাড়াও তিনি বিশ্বশান্তি অটুট রাখতে যুদ্ধ-বিগ্রহের পরিসমাপ্তি এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে জোট-নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা করি। জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি।

আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। করোনা মহামারির প্রতিঘাত নিরসনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সভাপতি শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সদস্যসচিব সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানী, ইরিনা বোকোভা, গোহ চোক টং।

পাঠকের মতামত