প্রকাশিত: ২৯/১২/২০২১ ৯:৪০ এএম
দৃশ্যমান রেল পথ

দৃশ্যমান রেল পথ
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেললাইনের কাজ ২০২৩ এর জুনের মধ্যে শেষ হবে এবং এই প্রকল্পের ত্রুটিগুলো পর্যালোচনায় আরও এক বছর প্রয়োজন হবে।

বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকটে অর্থনৈতিক জটিলতার কথা বিবেচনা করে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল সংযোগের রামু-গুনদুম অংশের কাজ স্থগিত রেখেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো না হওয়ায় রামু-গুনদুম রেললাইন থেকে বর্তমানে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা আসার সম্ভাবনা নেই।

প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমরা ১০০ কিলোমিটারের বেশি রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অংশ নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই।”

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, জমি অধিগ্রহণ এবং এই রুটে রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হলে আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে আরেকটি প্রকল্পের অধীনে রামু-গুনদুম রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন হবে।

২০১৮ সালে মিয়ানমারের সাথে বিরোধের ফলে নাফ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে বাংলাদেশ।

এদিকে, ২০২২ এর জুনের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা আরও ২ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেললাইনের কাজ ২০২৩ এর জুনের মধ্যে শেষ হবে এবং এই প্রকল্পের ত্রুটিগুলো পর্যালোচনায় আরও এক বছর প্রয়োজন হবে।

ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডর এবং রেল নেটওয়ার্কের সাথে সাথে কক্সবাজারকে যুক্ত করার জন্য ২০১০ এর জুনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশনের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা পাওয়া যায়নি কারণ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত আইএমইডি প্রতিবেদনে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রকল্প অর্থায়নকারী সংস্থা এডিবির সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়কে এক মাসের মধ্যে আইএমইডি-র কাছে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ রেলওয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন আইএমইডি ও ইআরডি কর্মকর্তারা।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও উইং প্রধান (এডিবি) ড. পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, রামু-গুনদুম রেললাইন নির্মাণের বিষয়ে ইআরডি অবগত নয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ও ইআরডির মাধ্যমে এডিবির সাথে যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি।

এদিকে, আইএমইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেললাইন নির্মাণ কাজ পরিত্যক্ত হওয়ায় এডিবি ঋণের একটি অংশ ফেরত নেবে। ফলে অন্য প্রকল্পে খরচ করার জন্য এজেন্সির সঙ্গে দর কষাকষির সুযোগ থাকছে । এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তারা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, রামু-গুনদুম রেললাইনের আনুমানিক ব্যয় ছিল ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৬১৬ কোটি টাকা এডিবি থেকে ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা।

বুয়েটের একজন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, “আমরা আপাতত প্রকল্পটি বাতিল করতে পারি। তবে ভবিষ্যতে, আমাদের এই রুটে একটি রেললাইন নির্মাণ করতে হবে কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্কের অংশ। আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের জন্য এই রুটের কোনো বিকল্প নেই।”

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব

আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, বৈদ্যুতিক টাওয়ার স্থানান্তরসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে এখনও।

প্রকল্পের সময় বাড়ানোর জন্য রেল মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডির কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে রেলওয়ে জানিয়েছে, প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত ১,৩৬৫ একর জমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। এজন্য প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন।

রেলওয়ে আরও জানিয়েছে, প্রায় ৫ বছর আগে প্রকল্প এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক টাওয়ার স্থানান্তরের জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে, টাওয়ার স্থানান্তরের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, গত অক্টোবর পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে; প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

কাজ চলমান

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের নির্মাণকাজ এখন দুই ভাগে চলছে।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া দোহাজারী-চকরিয়া অংশে ১৯টি রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি কোনো সেতুর কাজ। তবে ১১৪টির মধ্যে মাত্র ২৭টি কালভার্ট সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

তাছাড়া এ অংশের ৪৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে দোহাজারী, হারবাং ও চকরিয়ায় এই রুটের তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের মার্চে শুরু হওয়া চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশের অধীনে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৫টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি সেতুগুলোর নির্মাণকাজ চলছে।

এ অংশের ১১০টি কালভার্টের মধ্যে ৮৫টির নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ অংশে স্টেশনও নির্মাণ করা হবে। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রুটে ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ ও কক্সবাজারে তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে আটটি লিফট, গাড়ি পার্কিং সুবিধা ও হোটেল সুবিধাসহ ১৭ হাজার ৩৪৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি অত্যাধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া, চুনতি এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

তবে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক সংযোগ সড়ক নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইএমইডি কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, দেশে একটি নতুন প্রকল্পের প্রক্রিয়া শেষ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। ফলে স্টেশনের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তা না হলে কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রীদের।

সূত্র: টিবিএস নিউজ

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...