প্রকাশিত: ২১/১০/২০১৮ ৩:০৫ পিএম
মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ভয়ানক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় যুক্তরাজ্য। এই ইস্যুতে দেশটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা, মিয়ানমার-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক, যুক্তরাজ্যের মিয়ানমার নীতি নিয়েও কথা বলেছেন।

মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ

মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ
মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ
গত বছর আগস্টে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে সেনা অভিযান জোরদার করলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা এসব মানুষ খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ জোরালো করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্যও রয়েছে। দায়ীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বলেন,কিছু সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু সংশ্লিষ্টতা ছিল। তবে গত বছর রাখাইনের ঘটনার পর আমরা সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। মিয়ানমারের সরকার থেকে সামরিক বাহিনীকে আলাদা কঠিন কারণ তারা সরকারের অংশ।

রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ বলেন, এই ভয়ানক অপরাধে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে কী ঘটছে তা দেখতে আমরা আগ্রহী। সামগ্রিকভাবে এটা মিয়ানমারের স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা ভবিষ্যতে এই বার্তা দেবে যে, কোনও কিছু করে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না। আমরা আমাদের পদক্ষেপে পুরো ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছি না। আমরা শুধু যারা দায়ী তাদেরকেই বিচারের মুখোমুখি করতে চাইছি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে শুধু রাখাইনের অপরাধের কথা বলা হয়নি, এতে কাচিন ও শান প্রদেশের কথাও বলা হয়েছে। এই সফরে আমি কারেন ও কারেন্নি গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে তাদের গোষ্ঠীর সঙ্গেও ঘটা একই ধরণের অপরাধের কথা বলেছে। এমনকি অতীতেও এধরণের ঘটনা ঘটেছে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে আমরা এমন এক সংস্কৃতি দেখতে পাই যাতে কিছু ব্যক্তি ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। একারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য এসব ঘটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে আগ্রহী। কারণ আমাদের মতে, এসব অপরাধের দায়মুক্তি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার গঠন কঠিন হবে।

রাখাইন ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সরকারের মিয়ানমার নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, ঠিক কী পরিবর্তন হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে এই নীতি আরও জটিল ও কঠিন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আরও জানান, গত ৩০ বছর ধরে আমাদের নীতি ছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সমর্থন। সেই নীতি এখনও চলছে। কিন্তু রাখাইনে যা ঘটেছে সেজন্য এটা করা আরও জটিল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ আমার আর কোনওভাবেই সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করতে পারছি না। ব্রিটিশ সরকারের কোনও কোনও অংশ ওই নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। তারা মনে করছে আগের নীতির পুরোপুরি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আর সেকারণে আমরা সরকার ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টাকে সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু সেটা আরও জটিল পরিস্থিতির তৈরি করেছে।

রাষ্ট্রদূত জানান, আমরা মিয়ানমারকে সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছি। গত বছর আমরা ২০ কোটি মার্কিন ডলারের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছি। এর ফলে জাপানের পর আমরা দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দাতা দেশে পরিণত হয়েছি। তিনি বলেন, প্রচুর সমস্যায় জর্জরিত মিয়ানমার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসব চ্যালেঞ্জের কোন কোনটির শেকড় কয়েক দশকের গভীরে। সে কারণে এগুলোর দ্রুত সমাধান বা সংশোধন করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার ও দেশটির মানুষের বন্ধু হতে চায় যুক্তরাজ্য। আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য ও সমর্থনকারীও হতে চাই।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার জান্তা ঘনিষ্ঠদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাঘনিষ্ঠ চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ ...

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ব্ল্যাকলিস্ট, তালিকায় এক ডজন দেশ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ভিসা পাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...