আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার সব প্রমাণ মুছে ফেলতে চাইছে মিয়ানমার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের একটি গণকবরে বুলডোজার চালিয়ে তা নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে।
এদিকে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ওপর ডকুমেন্টারি নিয়ে কাজ করছে ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’। ওই প্রকল্প থেকে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে একটি ভিডিও সরবরাহ করা হয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে জঙ্গল নিশ্চিহ্ন করে ফেলা ও গণকবর গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। ভিডিওতে অর্ধেক মাটিচাপা দেওয়া ত্রিপল ব্যাগে মানুষের গলিত পা দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস লিউয়া বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণহত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখন গণহত্যার প্রমাণ স্থায়ীভাবে মুছে ফেলতে বুলডোজার চালাতে দেখা যাচ্ছে। মিডিয়াতে যে দুটি গণকবরের খবর এসেছে, তার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার একটি গণকবরের ওপর বুলডোজার চালানো হয়েছে। এর অর্থ, সেখানে গণহত্যার সব প্রমাণ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
গত বছরের আগস্ট মাসে গণহত্যা চালানোর স্থানটি হচ্ছে উত্তর রাখাইনের বুথিডাং শহরের মং নুতে। সেখানে গণকবরটির অবস্থান। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করার পর এক মাসেই মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো তাদের আসা অব্যাহত আছে। তবে জাতিগত নিধনের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।
এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা অভিযানের নামে সামরিক অভিযান চালানোয় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ১০০ জনের বেশি এমপি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব বরিস জনসনের কাছে লেখা এক চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের অবস্থা তুলে ধরে উচ্চকণ্ঠ হওয়ায় জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। লেবার পার্টির সাংসদ রুশনারা আলীসহ ১০০ জনের বেশি সাংসদের স্বাক্ষর রয়েছে ওই চিঠিতে।
তাঁরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের প্রধান হ্লাইয়াংকে তাদের নিরাপত্তা অপারেশনের জন্য অর্থবহ কোনো মূল্য দিতে হয়নি। হ্লাইয়াংয়ের শাস্তি না হওয়ায় এ কাজে তাঁর উৎসাহ বেড়ে গেছে। দেশটির অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমান সহিংসতাকে আগ্রাসীভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত কূটনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বিবৃতি আদায় করেছে এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করছে। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব পরামর্শ অবহেলা করেছে মিয়ানমার। এখন সামনে এগোনোর সময়। যদিও জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন আইসিসির কাছে যাওয়ার বিষয়টির বিরোধী, তবু আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে পারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র কাউন্সিলের বৈঠকের আগে যুক্তরাজ্যের সরকারের কাছ থেকে এটা শুরু হোক।
চিঠিতে আরও বলা হয়, যত দেশকে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচারের জন্য পক্ষে পাওয়া যাবে, তত হ্লাইয়াং ও তাঁর সেনাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে বেসামরিক মানুষের ওপর ভবিষ্যতে সামরিক নির্যাতন ঠেকানো যাবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সব রসদ সরবরাহ বন্ধ, সেনা প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।