প্রকাশিত: ১০/০৭/২০২২ ৮:৩৪ পিএম


ঈদুল আজহার ছুটিতে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসবেন বলে আশা করেছিলেন হোটেলমালিকেরা। অতিথিদের বরণ করতে প্রস্তুতিও নেন তাঁরা। পর্যটক টানতে হোটেলকক্ষ ভাড়ার ওপর সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তেমন সাড়া মেলেনি।

হোটেল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল সোমবার বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসবেন মাত্র সাত হাজার পর্যটক। তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ও চতুর্থ দিন বুধবার আসবেন প্রায় ৬৩ হাজার পর্যটক। এর পরদিন থেকে পর্যটকেরা যেতে শুরু করবেন। সব মিলিয়ে এবারের ঈদের কয়েক দিনের ছুটিতে ৭০ হাজারের মতো পর্যটক পাচ্ছে কক্সবাজার। পর্যটকদের থাকার জন্য এ শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ আছে। এগুলোতে প্রতিদিন থাকতে পারেন ১ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক।

হোটেলমালিকেরা জানান, গত ঈদুল ফিতরের ১০ দিনের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। তখন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যবসা হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এবার ঈদুল আজহার ছুটিতেও অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সে আশায় এখন গুড়েবালি। হতাশ পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কক্ষভাড়া সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও পর্যটকের সাড়া না পাওয়ার পেছনে পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে—১. সিলেটসহ দেশের উত্তরবঙ্গের ২০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মানুষকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। এখনো বন্যাকবলিত লাখো মানুষ। ওই সব অঞ্চলের মানুষ সাধারণত সৈকতে ভ্রমণে বেশি আসেন।

২. ঈদের ছুটির পরপরই শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে পরিবার নিয়ে সৈকতে ভ্রমণে আগ্রহী নয় সাধারণ মানুষ।

৩. পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটকের নজর কাড়ছে সুন্দরবন, কুয়াকাটা ও খুলনা অঞ্চল। আগে যাঁরা কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণ করেছেন, তাঁরা এবার ভ্রমণের তালিকায় যোগ করেছেন পদ্মা সেতু এবং আশপাশের এলাকাগুলোকে।

৪. করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার দ্রুত বাড়ছে। এ কারণে মানুষের মনে শঙ্কা জাগছে।

৫. বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগামী, অর্থসংকটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এ কারণে ভ্রমণের খরচ সাশ্রয় করছেন তাঁরা।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতে ভ্রমণে আসা লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। এখন কয়েক দিনের ছুটিতে সৈকতে ভ্রমণে আসার মতো টাকা অনেকের হাতে নেই। বাজার পরিস্থিতিও খারাপ। তা ছাড়া সিলেটসহ উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি, করোনার ঊর্ধ্বগতি, এসএসসি পরীক্ষা—সবকিছু মিলিয়ে এবার ঈদের ছুটিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি পর্যটক পাচ্ছে না কক্সবাজার।

বেশকিছু কারণে এবার ঈদের ছুটিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি পর্যটক পাচ্ছে না কক্সবাজার
বেশকিছু কারণে এবার ঈদের ছুটিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি পর্যটক পাচ্ছে না কক্সবাজারছবি: প্রথম আলো
শুধু কক্সবাজার নয়, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতেও পর্যটক নেই দাবি করে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) কক্সবাজারের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত ও সুন্দরবন এলাকায় বিপুল পর্যটকের সমাগম আশা করা হয়েছিল। বাস্তবে সেখানেও পর্যটকের তেমন সাড়া নেই।

কক্সবাজার শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার অন্তত ৫০টি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ রোববার ঈদুল আজহার প্রথম দিন প্রতিটি হোটেলে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন পর্যটক অবস্থান করছেন। আগামীকাল সোমবার এ সংখ্যা বাড়বে তিন গুণ। মঙ্গলবার ও বুধবার হোটেলের ৪০ শতাংশ কক্ষে অতিথি হবেন ৬০ হাজারের মতো পর্যটক। পরদিন থেকে পর্যটকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক টানতে এবার পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্টহাউস, কটেজে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। তবে তারকা মানের আট থেকে নয়টি হোটেলের কক্ষভাড়া ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। মাঝারি মানের পাঁচ শতাধিক হোটেলের অবস্থা খারাপ, মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে।
সুত্র: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...