উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০/১২/২০২২ ১২:১৩ পিএম

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে রোহিঙ্গা অর্থায়নেও। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য চলতি বছর জাতিসংঘ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) অর্থের মোট চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতিতে গত ছয় জেআরপির মধ্যে বিশ্বের কাছ থেকে এবার সবচেয়ে কম সহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা। চলতি বছরের ১১ মাসে চাহিদার মাত্র সাড়ে ৪৪ শতাংশ সহযোগিতা সংগ্রহ করতে পেরেছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যান্টেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওসিএইচএ) প্রকাশিত হিসাব থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউএনওসিএইচএর তথ্য অনুযায়ী, জেআরপির চাহিদার ৩৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার এখন পর্যন্ত মিলেছে। বাকি প্রায় ৪৯ কোটি ডলার সহযোগিতা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে পরিকল্পনার বাইরে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রোহিঙ্গা সহায়তায় এসেছে। সে অনুযায়ী রোহিঙ্গা সহায়তায় মোট ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। এর আগে ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৬৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে চাহিদার ৭২ শতাংশ অর্থ সহযোগিতা পেয়েছিল রোহিঙ্গারা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির সমকালকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্রমাগত দাতাদের এ বিষয়ে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাঁদের একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, রোহিঙ্গা সংকটের দায় বাংলাদেশের একার নয়, এ দায়িত্ব পুরো বিশ্বের।
যেখানে জেআরপিতে এ বছর প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ১০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, জার্মানি ও নরওয়ে উল্লেখ করার মতো সহযোগিতা দিয়েছে। রোহিঙ্গা সহায়তার বাকি অংশ অন্যান্য দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো দিয়েছে।

জেআরপি অনুযায়ী পর্যাপ্ত অর্থায়ন আসেনি জানিয়ে ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, তার পরও আমরা দাতাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তহবিল কম আসায় পরিকল্পিত অনেক কিছুই কমিয়ে আনতে হয়েছে। তবে প্রধান মৌলিক সেবাগুলো বিশেষ করে- খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী বছর ব্যয় দক্ষতার উন্নয়ন করা হবে। সেই সঙ্গে প্রথাগত দাতাদের বাইরে অন্য দাতাদের অর্থায়নে উৎসাহিত করা হবে। ব্যয় নির্বাহে শরণার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব জীবিকা আহরণে জোর দেওয়া হবে, যাতে আনুদাননির্ভরতা কমে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে পুরো বিশ্ব এক প্রকার সংকটে পড়েছে। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। যার কারণে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর এক প্রকার চাপে পড়েছে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা সহায়তার সিংহভাগই আসে পশ্চিমা জোট থেকে। ইউক্রেন শরণার্থীদের দিকে তাদের মনোযোগ ঘুরে যাওয়ার কারণেও রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর রোহিঙ্গা অর্থায়নের জন্য যে জেআরপি তৈরি করা হয়, তা এক বছরের পরিবর্তে একাধিক বছরের জন্য তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েসের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ইউক্রেনসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে প্রতিবছর রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ আলাদা করে বরাদ্দ করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায়। আর এ জন্য এক বছরের জেআরপির পরিবর্তে একাধিক বছরের জন্য জেআরপি করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে করে তারা আগে থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে পারে। আর যেহেতু শুরু থেকে রোহিঙ্গা অর্থায়নের সিংহভাগ যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে আসছে। একাধিক বছরের জন্য জেআরপি ইতিবাচক বিবেচনায় রাখছে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে ১৯০ কোটি ডলারের বেশি সহযোগিতা করেছে দেশটি।
এ বছরের জেআরপির বাজেট ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ভাসানচরের জন্য ছিল প্রায় ১০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের জেআরপিতেও রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যকার সুসম্পর্কের বিষয়টিতে জোর দিয়েছে জাতিসংঘ। এটি এখনও মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে স্থানীয়রাই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। আর বর্তমানে মানবিক সংকটের পাঁচ বছর অতিক্রম করেছে। এখনও উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দিয়ে আসছে। স্থানীয় অবকাঠামোর ওপর আর্থসামাজিক পরিস্থিতির চাপ সামলাতে মানবিক সহায়তাকারীদের জন্য রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সুসম্পর্ক অন্যতম অগ্রাধিকার। আর এ নিয়ে কাজও করছে মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত