উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫/০৯/২০২২ ১০:০৪ এএম , আপডেট: ২৫/০৯/২০২২ ২:৫১ পিএম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশেই স্তুপ করে রাখা ময়লা

দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অনেক এলাকায় দেখা যাচ্ছে ময়লার স্তূপ। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নষ্ট হচ্ছে সৈকতের পরিবেশ। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতটি ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। হুমকির মুখে পড়েছে সাগরের জীববৈচিত্র্য।

সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণা ও গরু বিচরণের কারণে সৈকতে বসে থাকা যায় না। সুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় হোটেল-মোটেল থেকে তরল বর্জ্য ড্রেন দিয়ে পড়ছে বাঁকখালী নদীতে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। সৈকতের এমন দুরবস্থা যেন দেখার কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার কার্যক্রম চলছে। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যান। আর ছুটির দিনগুলোতে লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পর্যটকরা ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু করে সায়মান বিচ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ডাবের ছোবড়া, ময়লার স্তূপ, চিপসের খালি প্যাকেটসহ নানা আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে আশপাশের ভাতের হোটেল ও ঝুপড়ি দোকানের ময়লা। এসব কারণে সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা সৈকতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন না।

সাধারণত সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। হোটেল মালিকরা চাঁদা তুলে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে মাঝে মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন। সরকারের আট সদস্যের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে। এই কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক। কিন্তু নামেই কমিটি আছে, কাজের কাজ কিছুই হয় না। ছোট ছোট দোকান, ঝুপড়ি দোকান, ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক—এদের নির্ধারিত হারে ফি প্রশাসনের কাছে দিতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তার সুফলও পর্যটকরা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাকে বদলি করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে উদ্যোগ নিয়েছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গত বুধবার সরেজমিন এই প্রতিনিধিরা রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ছিলেন। তখন তারা দেখেন যে, ভাঙন ঠেকাতে সৈকতে জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঢেউগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে নিচের দিকে গর্ত হয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জনবলসহ অন্যান্য সামগ্রীর সংকট আছে। তাই জনবল বৃদ্ধি এবং ময়লা-আবর্জনা অপসারণের জন্য আধুনিক মানের ভেহিকল ক্রয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।

কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, এখানে অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিকমতো হয় না।

বাঁকখালী নদীর উজানে ৩৫০ থেকে ৫০০ মিটার প্রশস্ততা থাকলেও মোহনায় তা সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এখানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলে, তার ওপর নদী খননের মাটি ফেলে হাউজিং প্রকল্প করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, যেন ইসিএ এলাকা নির্ধারিত সমুদ্রসৈকতের ৩০০ মিটারের মধ্যে নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বহুতল ভবনগুলো ভেঙে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমুদ্রসৈকত রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন শুরু হয়, এটাই প্রশাসনের প্রতি পরিবেশকর্মীদের দাবি। সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অন্যত্রে পুনর্বাসন করা হোক।

সমুদ্রদূষণের বিষয়ে গ্রিন কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, যেভাবে চলছে তাতে একদিন এই কক্সবাজারকেও হয়তো পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এখানকার প্রশাসনের সেই সক্ষমতা নেই। পর্যটন বোর্ডকে এখানে এগিয়ে আসতে হবে। শিগিগরই এটার একটা বৈজ্ঞানিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি হোটেল-মোটেলের ওপর চাপ কমিয়ে বিকল্প ‘কমিউনিটি ট্যুরিজম’ ধারণার বিকাশ ঘটাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে কী পরিমাণ পর্যটক একদিন অবস্থান করতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। এরপর অবশ্যই এটার লাগাম টানতে হবে। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কক্সবাজার অপরিচ্ছন্ন শহর। এখানে পৌরসভা ও অন্য বিভাগের গাফিলতি রয়েছে। আমরা ট্যাক্স দেই পৌরসভাকে। অথচ আমাদেরই লাখ লাখ টাকা খরচ করে বর্জ্য ফেলে দিয়ে আসতে হয়। এই দায়িত্ব ছিল মূলত পৌরসভার।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘উই ক্যান’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ওমর ফারুক জয় বলেন, কক্সবাজারের তলদেশ থেকে আর বিশুদ্ধ মিষ্টি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেল-মোটেলের তরল বর্জ্য কিছুটা সমুদ্রে যাচ্ছে, আর কিছুটা মাটির নিচের পানিতে মিশে যাচ্ছে। সুত্র: ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত

৪ দিন থাকবেন সুইডেনের রাজকন্যা, দেখতে আসবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। তার ...

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘দুই কোটি টাকা দিয়ে পোস্টিং নিয়েছি, ঘুস না নিলে টাকা তুলব কীভাবে?’

দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। টেন্ডারের গোপন রেইট ফাঁস, নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে ...