এতোদিনে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের কর্মকান্ডে এমন এক বিষয় উঠে এসেছে, যা শুনে অনেকেই না হেসে পারবেন না। সেটা হলো, বিজেপি মুসলিম নারীদের ভালোবাসে, তবে পুরুষদের নয়। অবশ্য বিষয়টি হাসির নয়; বেশ গুরুত্ব রয়েছে তাতে।
গত বছরের আগস্টে তিন তালাক নিষিদ্ধ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তার চার মাস পরে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাস হয়। সেই আইনে বলা হয়, তিন তালাক দেওয়ার পর কোনো নারী মামলা করলে ওই পুরুষের তিন বছরের কারাদণ্ড হবে।
এ ধরনের আইনে উল্লাস প্রকাশ করেন দেশটির নারীরা। অন্যদিকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব যায় মোদির ঝুলিতে। যদিও এ ধরনের অভিযোগ থেকে ভারতের পুরুষদের বেঁচে যাওয়া আহামরি কোনো বিষয় নয়।
বছরে পর বছর ধরে মুসলিম নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের আন্দোলনের ফল ওই আইন। মুসলিম নারীদের ব্যাপারে এ ধরনের আইন হলেও হিন্দু নারীদের ব্যাপারে কোনো আইন হয়নি। এমনকি তারা দলগত ধর্ষণের শিকার হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচার পায় না।
অন্যদিকে লাভ জিহাদের বলি হচ্ছে মুসলিম পুরুষরা। হিন্দু নারীরাও তার বলি হচ্ছে। অতি উৎসাহী কিছু মানুষ অভিযোগ করছে, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তরিত করছে। ফলে দায় পড়ছে মুসলিম পুরুষদের ঘাড়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে নয়াদিল্লির পার্শ্ববর্তী ঘাজিয়াবাদে এক যুবককে কুপিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে লাভ জিহাদের অভিযোগে।
আন্তঃধর্মীয় বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম পুরুষ এবং হিন্দু নারীকে পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। হিন্দু নারীকে বিয়ে করতে চাওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে মুসলিম তিন ভাইকে আদালত প্রাঙ্গনে পেটানে হয়েছে।
আরো পড়ুন : হুথিদের বিরুদ্ধে শিশুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অভিযোগ
অথচ সে ব্যাপারে অভিযোগে বলা হলো, ওই তরুণীকে বিয়ের বিষয়টি একেবারে ভুয়া। ইসলামি জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ানোর জন্য ওই তরুণীকে সিরিয়ায় পাঠানোর ছক এঁকেছেন মুসলিম তরুণরা। তবে এসব অভিযোগ বেশ আলোচিত হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিশ্চুপ ছিলেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের কর্ণাটকে ২০ বছর বয়সী ধনশ্রী আত্মহত্যা করেন। একটি ছবির জেরে তাকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে। সেই ছবিতে তাকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখা গেছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি মুসলিম হয়েছেন। তবে সেই দাবি তিনি নাকচ করে দিয়েও পার পাননি। মুসলিম এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আত্মহত্যা করেন তিনি।
গত বছরে আগস্টে আখিলা নামের এক হিন্দু তরুণী মুসলিম হয়ে বিয়ে করেন। তার আগে মুসলিম নারীদের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি।
পরে মেয়ের বিয়ের খবর জেনে আদালতে অভিযোগ দেন তার বাবা। আদালত নির্দেশ দেয়, মেয়ের শরীরের অবস্থা ভালো না। সে কারণে বাবা-মার ইচ্ছানুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও শরীর নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুস্থ না থাকায় সিদ্ধান্ত নেবেন বাবা-মা। বসবাস করবেন তাদের সঙ্গেই।
অথচ ওই তরুণী বারবার বলেছে, আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চাই। আমাকে কেউ জোর করে ধর্মান্তরিত করেনি। বাবা আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে। আমাকে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হোক। পরে সুপ্রিম কোট তাকে কলেজে পাঠালেও তা পাল্টে যায়।
এজাজ শরীফ নামের একজন এ ব্যাপারে আলজাজিরায় মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন। তিনি বলেন, বিজেপি এবং মোদি মুসলিম নারীদের তিন তালাকের বিলের অনুমোদন দিয়েছে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে। এর বাইরে আর কিছুই নয়।
কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদিও জানেন, ভারতের মুসলিমরা তাকে অতীতে সেভাবে ভোট দেয়নি, ভবিষ্যতেও তারা মোদিকে পছন্দ করবে না। সে কারণে মুসলিম নারীদের সম্মান নয়, রাজনীতির খাতিরেই 'ভালোবেসেছেন' মোদি।
আলজাজিরা অবলম্বনে কাওসার বকুল