উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০/০২/২০২৩ ৮:৪৯ এএম

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের বাড়তি আকর্ষণ কক্সবাজার-টেকনাফ দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। যে কেউ কক্সবাজারে বেড়াতে আসলে কিছু সময় নিয়ে ঘুরতে যায় মেরিন ড্রাইভে। এই সড়ক দিয়ে যেতেই সাগরের বিশাল ঢেউ পাহাড়ের শব্দ ও প্রকৃতির শিল্পে আকাঁ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন যে কেউ। হিমছড়ি, দরিয়া নগর, ইনানী ও পাটোয়ার টেকসহ নামকরা এসব স্পটে যেতেই ব্যবহার হয় এ-ই সড়ক। কিন্তু এই সড়ক এখন চলে গেছে থ্রি হুইলারের দখলে। গত এক মাস ধরে চান্দের গাড়ি (জীপ) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এদের দৌরাত্ম আরও বেড়েছে বহুগুণ। পর্যটকের নিরাপদ যাদের হাতে তাঁরাই অল্প বয়সী চালক। এদের কারোরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। কয়েকজনের থাকলেও তা নবায়ন হয়নি। এদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা। যাদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। সড়ক এক প্রকার প্রতিযোগিতায় মেতে অনেকক্ষেত্রে।

জেলা জীপ কার মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যটকের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। এই সড়ক এখন টমটম, ব্যাটারী চালিত রিকশার দখলে। সড়কে মাঝপথে যানজট লেগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। চান্দের গাড়ি পর্যটকের জন্য অনেকটা নিরাপদ ছিলো। দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে এই গাড়ি বুকিং দিতো।

কক্সবাজার টুরিস্ট জীপ মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোঃ জামাল বলেন, দেশের যেকোনো পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের চাহিদা চান্দের গাড়ি। তারা হৈ-হুল্লোড় করে গান গেয়ে প্রকৃতির দৃশ্য দেখে দেখে গন্তব্য যায়। বন্ধু-বান্ধব একসাথে মজা করতে পারে। একারণে মেরিন ড্রাইভের পর্যটন স্পটগুলোতে কমে যাচ্ছে পর্যটকের আনাগোনা।

মধ্যম বাহাড়ছড়া এলাকার ফারুক আহমেদ বলেন, আমার নিজেরও গাড়ি আছে। ভ্রমন পিপাসুরা এসব গাড়ি পছন্দ করে। নিরাপদে তারা ঘুরাঘুরি করতে পারে। চান্দের গাড়ি বন্ধ হওয়ায় ও-ই সড়ক দিয়ে ভাড়ায় চালিত গাড়িগুলো পর্যটকদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

পর্যটকরা জানান, ছোট গাড়ি নিয়ে দূরের গন্তব্য খুবই ঝুকিপূর্ণ। এছাড়া পর্যটকদের কাছ থেকে সিএনজি ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। এই অচলাবস্থা চলতে থাকায় বেড়েছে পর্যটক হয়রাণি, ভোগান্তি।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়- এই সড়কে চলাচলকারী ইঞ্জিনচালিত কোনো গাড়িরই রুটপারমিট নেই। কিন্তু পর্যটক ও স্থানীয় যাত্রী সাধারণের চাহিদা-আকাঙ্খার কারণে মেরিন ড্রাইভ সৃষ্টির আগে থেকে চান্দের গাড়ি গুলোর যাত্রা শুরু হয় পর্যটক সেবায়।

গাজিপুর থেকে শফিক আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে প্রায় আসা হয়। মেরিন ড্রাইভ সুন্দরের কথা অনেকের কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু এই সড়কে ভ্রমণ করার মতো নিরাপদ কোনো যানবাহন না থাকায় মেরিনড্রাইভ সড়কে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারিনি। সিএনজি বা অটোরিক্সায় করে ভ্রমণ করা এই সড়কের জন্য অনিরাপদ। পরিবার নিয়ে যতোবারই এসেছি জীপ নিয়ে ঘুরে আসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

মোস্তফা সরয়ার নামে এক চালক বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ থেকে কক্সবাজারে জীপের প্রচলন আছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য আনন্দের নতুন মাত্রা হিসাবে চান্দের গাড়ি (জিপ) গুলো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় বাহণ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এক সময় এসব গাড়ি সমুদ্রের বালিচর দিয়ে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচল করত কিন্তু মেরিন ড্রাইভ তৈরি হওয়ার পর সেই সড়ক দিয়ে পর্যটকরা বাড়তি বিনোদন পাচ্ছে।

কক্সবাজারে প্রায় ৭০-৮০ টির মতো জীপ গাড়ি আছে। যেখানে কর্মরত মালিক চালকসহ কয়েকশো পরিবার। কিন্তু কোন ঘোষণা ছাড়ায় ২৩ জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যায় এসব গাড়ি। ফলে মানবতার দিন কাটাচ্ছে কয়েকশো পরিবার। এদিকে প্রায় একমাস ধরে মেরিনড্রাইভ সড়কে পর্যটকবাহী যানবাহনগুলো বন্ধ থাকায়, ফের কর্মসংস্থান হারাচ্ছে পরিবহণ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ হ্রাস পাওয়ায় হাত গুটিয়ে নিচ্ছে উদ্যোক্তারাও। বিষয়টিকে পর্যটনের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

এব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান- বেশ কয়েকটি অভিযোগের কারণে এসব গাড়ি বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে রেখেছি।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...