থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি বিস্ময়কর গতিতে ঘুরছে। সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর দুই সপ্তাহ পর পুনরায় এটি দখলে নিয়েছেন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সামরিক জান্তার অনুগত সেনারা। মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলে একের পর এক পরাজয় সত্ত্বেও মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছেন সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেখানকার পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল।
চলতি মাসের শুরুতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) মায়াবতীর আশপাশের সব সামরিক ঘাঁটি দখলে নেওয়ায় বছর তিনেক আগে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সূচনা হয়। কারণ কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল কেএনইউ। শহরটি নিয়ন্ত্রণের তাৎপর্য অনেক বেশি। কারণ থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের বেশির ভাগ বাণিজ্য এই সীমান্ত দিয়েই হয়ে থাকে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকটি লাভজনক ক্যাসিনোর অবস্থান এই শহরে। তবে কেএনইউ কখনোই মায়াবতী দখল করেনি। বরং শহরের বাইরে সামরিকঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ করতে বিদ্রোহীদের জোট পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) কিছু সেনা মোতায়েন করেছিল। শহর পরিচালনার জন্য পুলিশ, অভিবাসন ও সরকারি কর্মকর্তাদের বহাল রেখে সীমান্ত বাণিজ্য সচল রাখে বিদ্রোহীরা।
বিদ্রোহীদের ক্ষিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এই অঞ্চলে অন্যান্য কারেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি। কারণ সম্প্রতি এরা সামরিক জান্তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। অন্যান্য কারেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত এড়ানোই প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন কেএনইউর নেতারা।
এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম কারেন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। এর নেতা সাও চিত থু গত নব্বইয়ের দশকে কেএনইউ ছেড়ে যান।
তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কুখ্যাত স্যুয়ে কোকো ক্যাসিনো কমপ্লেক্স, যেখানে মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আছে।
এখান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে গঠিত হয়েছে কয়েক হাজার সেনার একটি বাহিনী আর ওই বাহিনী সীমান্তরক্ষী হিসেবে সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। গত জানুয়ারিতে থু ঘোষণা দেন, তিনি জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন। তবে কেএনইউর অভিযোগ, ঘাঁটি থেকে বিতাড়িত সেনাদের সহায়তা করেছেন থু।
এ ছাড়া কেএনইউর শঙ্কার অন্যতম কারণ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিমান শক্তি। যেসব এলাকায় স্থল অভিযানে জান্তা বাহিনী পরাজিত হয়েছে, সেসব এলাকায় বিমান দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গত সপ্তাহে মায়াবতী শহরে কেএনইউর বিভিন্ন অবস্থানে আকাশযান থেকে বোমা ছোড়ে সামরিক জান্তা। এতে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং নিরাপত্তার জন্য হাজারো মানুষ থাইল্যান্ডে চলে যায়।
কেএনইউ সূত্র বলছে, মায়াবতী নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধের প্ররোচনা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। কারণ এতে বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বড় পরিসরে শরণার্থী থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিত। গোষ্ঠীটির দাবি, মায়াবতীতে আরো ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে এবং শহরের ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে আরো বড় যুদ্ধে মনোযোগ দিতে ঘাঁটি ছেড়েছে কেএনইউ।
মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর সীমান্তের সড়কে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সাঁজোয়া যান ও কামান মোতায়েন করে সামরিক জান্তা। আর এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেনারেল সো উইন। তাই এই এলাকায় সফলতা পাওয়া জান্তার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি