ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৭/০৪/২০২৩ ৭:০৩ এএম

মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ ও সংকটময় পরিস্থিতি নিরসনে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মিয়ানমার ও দেশটির প্রতিবেশী ভারত ও চীন ছাড়াও আসিয়ানভুক্ত থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ইন্দোনেশিয়ার সরকার এবং বিভিন্ন থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় অংশ নেন। গোপন বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গতকাল এ তথ্য জানায়।

সামরিক জান্তার শাসনাধীন মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি এখন মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশের জন্যও বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম থাইগার জানিয়েছে, গত মাসে থাইল্যান্ডে ট্র্যাক ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ (১.৫) শীর্ষক এক সংলাপে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই আলোচনার ধারাবাহিকতায়ই মঙ্গলবারের বৈঠকটির আয়োজন করা হয়।

মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে গত বছরের এপ্রিলে প্রথম আসিয়ান ব্লকের সদস্যরা এক শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণে সম্মত হয়। কিন্তু বর্মি সামরিক জান্তা এখন পর্যন্ত এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সফল হতে না পারায় পরিকল্পনাটি নিয়ে আসিয়ান ব্লকে এখন ক্ষোভ বাড়ছে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক সূত্র জানিয়েছে, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আলোচকরা এখন মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী। যদিও এনইউজিকে এরই মধ্যে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে নেপিদো।

এ বিষয়ে ওই সূত্র বলেন, ‘তারা এখন কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে এনইউজির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করতে চাচ্ছে। কারণ এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও এনইউজির মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে আশাবাদী।’

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। শপথ নেয়ার আগেই ক্ষমতাচ্যুত হয় নোবেলবিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত সরকার। এর পর থেকেই মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমে আসে বিপুলসংখ্যক গণতন্ত্রকামী। নির্মমতার মাধ্যমে এ বিক্ষোভ দমনের প্রয়াস চালায় সামরিক জান্তা। বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানায় দেশটির জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক বিভিন্ন বিদ্রোহী ও সশস্ত্র সংগঠন। সামরিক জান্তাবিরোধী বিভিন্ন পক্ষ একত্রিত হয়ে গঠন করে জান্তাবিরোধী ঐকমত্যের ছায়া সরকার এনইউজি। তীব্রতা পায় সামরিক জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংঘাত।

একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় একটি থিংকট্যাংক সংস্থা এ বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকের আলোচনাগুলো ছিল প্রধানত সংঘাত নিরসন, যুযুধান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের পথ চালু করা এবং মানবিক সহায়তাকেন্দ্রিক। পরবর্তী বৈঠকটি লাওসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে এক সূত্রের বক্তব্য হলো ‘এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিকে আমলে নেয়া প্রয়োজন। তাদের জন্য সংঘাত নিরসনই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের বিষয়।’

বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ভারত ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কারো কাছ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, বৈঠকটি সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই।

তবে এনইউজির মুখপাত্র কিয়াও জ বলেছেন, তাদের ছায়া সরকার প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে সংঘাত নিরসন ও নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব ধরনের প্রয়াসকে আমরা স্বাগত জানাই।’

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মিয়ানমার সফর করেছেন। সর্বশেষ গত সোমবারও বর্মি জান্তার প্রধান মিন অং হ্লাইং ও সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

তবে মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে আসিয়ান ঘোষিত পাঁচ দফার পরিকল্পনাকেই এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে গৃহীত একমাত্র আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দাবি করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য প্রধানত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে বৈরিতা নিরসন ও আলোচনা শুরুর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে।

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত আসিয়ানের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বর্মি সামরিক জান্তার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির জেনারেলরা এখন পর্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এসেছেন।

বিষয়টি নিয়ে এক সূত্রের বক্তব্য হলো ট্র্যাক ওয়ান পয়েন্ট ফাইভে গৃহীত প্রয়াস আসিয়ানের পরিকল্পনাকে প্রতিস্থাপন করবে না, বরং এটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।

সুত্র: বণিক বার্তা

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...

মিয়ানমারের পরবর্তী নির্বাচন দেশব্যাপী নাও হতে পারে: জান্তা প্রধান

মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরলে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের। তবে সে নির্বাচন ...

এমভি আবদুল্লাহতে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব ...