মিয়ানমার থেকে আসা গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে ৩-৪ মিনিটের ব্যবধানে পরপর কয়েক দফা এই বিকট শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তবর্তী জনবসতিতে।
রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে মাঝেমধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শনিবার রাতের মতো এমন আকস্মিক বিকট শব্দ নিকট অতীতে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন, উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী পার্বত্য উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা এই শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
পালংখালীর রহমতের বিল গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ বড় ধরনের বজ্রপাতের মতো জোরে শব্দ হয়, তাৎক্ষণিক বুঝে উঠতে পারেনি কি হয়েছে। গোলাগুলির নয় এই শব্দ অন্যকিছুর হতে পারে কারণ স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ ছিল না।’
ভিন্নধর্মী এবং বিস্ফোরণের মতো শব্দে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়, অনেকেই ঘর-বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। রাজাপালংয়ের কুতুপালং গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গ্রামেও এই শব্দ পাওয়া গেছে, শব্দের ফলে সৃষ্ট কাঁপুনিতে মনে করেছি ভূমিকম্প হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে আসি, এমন শব্দ আগে কখনো শুনিনি। আমরা আতঙ্কে আছি।’
রোববার ৮ বিভাগে অবরোধের ডাক ইনকিলাব মঞ্চের
‘আসন সমঝোতার জোটে’ চলছে শেষ মুহূর্তের আলোচনা, ঐকমত্যের ঘোষণা রোববার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও আশ্রিত রোহিঙ্গারা একই শব্দ শুনতে পেয়েছেন। সাহাত জিয়া হিরো নামে উখিয়ার ক্যাম্পে বাস করা একজন রোহিঙ্গা চিত্রগ্রাহক ও অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘মিয়ানমারের জান্তা সরকার উত্তর মংডু এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে, যার শব্দ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেও শোনা যাচ্ছে।’
মংডু ডেইলি নিউজ ও আরকান আপডেট নামে দুটি রাখাইনভিত্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুক পেজে উত্তর মংডুতে বিমান হামলার খবর প্রকাশ পেয়েছে।
যেখানে বলা হয়, ‘শনিবার রাত ১১টা ২০ পর্যন্ত (স্থানীয় সময়), জান্তা বাহিনীর এসএসএ যুদ্ধবিমান উত্তর মংডুতে কিয়াও চাউং ডিভিশন এবং গান চাউং ব্যাটালিয়নে তিনবার গোলাবর্ষণ করেছে। এ ছাড়া, একটি ওয়াই-১২ বিমান আকাশে উড়ছে।’
বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারেই রাখাইনের মংডু টাউনশীপের উত্তর মংডু অঞ্চল, যেখানকার ২৭১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২০২৪ ডিসেম্বর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি।
জান্তা নিয়ন্ত্রিত সামারিক বাহিনীর সঙ্গে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি তীব্র সংঘাতে লিপ্ত হয়, যা এখনো চলছে। জাতিসংঘ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা এই সংঘাত-সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনুমানিক রাত ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে ১০টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে উখিয়া ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ হোয়াইক্যং বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকার নিকটবর্তী মায়ানমারের অভ্যন্তরে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সীমান্ত পিলার বিআরএম-১৮ থেকে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এবং শূন্য লাইন থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভেতরে বলিবাজার এলাকায় এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, মায়ানমার বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান আরাকান আর্মির দখলে থাকা বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করে তিনটি বোমা নিক্ষেপ করে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজিবি অধীনস্থ সব বিওপি ও ক্যাম্প এলাকায় টহল কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৩ ও ১৭ ডিসেম্বর রাতেও মিয়ানমার অংশ থেকে এপারে সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।