মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে একটি হাসপাতালে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে হামলার শিকার হাসপাতালটি রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক-ইউ শহরে অবস্থিত, যা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা বিবিসিকে বলেন, নিহতদের বেশিরভাগই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন। এটি বেসামরিক স্থানে সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা। বেসামরিকদের বোমা হামলার দায় তাদেরই নিতে হবে।
আরাকান আর্মির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে হামলায় ঘটনাস্থলেই ১০ রোগী নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন।
এই হামলা নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কোনও বিবৃতি দেয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে তোলা বলে ধারণা করা ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে হাসপাতাল কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সিলিং, ভাঙা হাসপাতালের বেড এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেনাবাহিনী বিমান হামলা বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা পুনর্দখলের চেষ্টা করছে। শত্রুপক্ষের ওপর বোমা ফেলতে সেনারা প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে।
বহু বছর ধরে সেনা সরকার জাতিগত মিলিশিয়াদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত। এক পর্যায়ে দেশের অর্ধেকের বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল।
তবে সম্প্রতি চীন ও রাশিয়া থেকে প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম আসায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বিমান হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণের মাধ্যমে জান্তা সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে, একটি সেনাবাহিনী পরিচালিত মোটরাইজড প্যারাগ্লাইডার ধর্মীয় উৎসবে বিক্ষোভরত একটি জনতার ওপর দুইটি বোমা ফেললে ২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
জান্তা সরকারের অধীনে জনগণের স্বাধীনতাও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর হিসাব অনুযায়ী, কয়েক হাজার রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরমধ্যেই জান্তা সরকার ২৮ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করেছে এবং একে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথ বলে দাবি করছে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এ নির্বাচন মুক্ত বা সুষ্ঠু হবে না। বরং এটি সেনা সরকারকে বৈধতার আবরণ দেবে। জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ টম অ্যান্ড্রুজ একে “ছদ্ম নির্বাচন” বলে উল্লেখ করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার অভিযোগে সাধারণ নাগরিকদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। একজন ব্যক্তিকে কেবল ফেসবুকে সরকার বিরোধী বার্তা পাঠানোর অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সেনা সরকার আরও জানায়, নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িত ১০ জন কর্মীকে খুঁজে বের করা হচ্ছে।
জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের বয়কট ঘোষণা করেছে।
সূত্র: বিবিসি