প্রকাশিত: ০৬/১১/২০২১ ৯:০৬ এএম
ফাইল ছবি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ::

ফাইল ছবি

উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে বাংলা শেখা অব্যাহত রেখেছে প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র। ক্যাম্পে ইংরেজী ও বার্মিজ ভাষা ছাড়া বাংলা পাঠদান সরকারীভাবে অবৈধ। সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না মোটেও।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশী নাগরিক দাবি করে কক্সবাজারে বসবাস করছে হাজারো রোহিঙ্গা। ভবিষ্যতে কোথাও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে এদেশের নাগরিক প্রমাণ করতে তারা বাংলা ভাষায় পড়ালেখা করছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পুরনো কিছু রোহিঙ্গা সন্তানের দেখাদেখিতে বাংলা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। ইতোপূর্বে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে রোহিঙ্গা সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছে। ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করছে। প্রমাণস্বরূপ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত, এনআইডি ও তাদের পিতা-মাতার নামে বাংলাদেশে ক্রয়কৃত জমির খতিয়ান প্রদর্শন করে চলেছে। এনআইডি, জমির দলিল-খতিয়ান, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সনদ দেখে কেউ রোহিঙ্গাদের বিদেশী নাগরিক বলতে পারছেন না। এ কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রকাশ্যে পড়ানো হচ্ছে বাংলা পাঠ্যবই। আশ্রয়ক্যাম্পে বার্মিজ ও ইংরেজি ব্যতীত রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলা পাঠদান করা চলবে না মর্মে সরকারের নির্দেশ রয়েছে। এই নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণীর রোহিঙ্গাদরদি এনজিও রোহিঙ্গা শিশুদের আশ্রয় ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টাগুলোতে বাংলা শেখায় শিক্ষাদান করছে।

সূত্র জানায়, ১৯৭৮, ১৯৯১-৯২ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সন্তান অনেকে বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত। কেউ কেউ কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে। কেউ কেউ পৌঁছেছে কলেজ ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত। ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে তারা সার্টিফিকেটও পেয়েছে। পুরনো রোহিঙ্গাদের দেখাদেখিতে বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গা অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বাংলাদেশী নাগরিক বানাতে বাংলা পাঠ্যবই শিক্ষা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আশ্রয় শিবিরে গড়ে ওঠা পাঠশালাগুলোতে (লার্নিং সেন্টার) আরবী, ইংরেজী ও বার্মিজ শিক্ষা (ভাষা) ব্যতীত বাংলাপাঠ্যবই শিক্ষাদান সরকারীভাবে সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। তবে, কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহী এনজিও রোহিঙ্গাদের রাজী রাখতে ক্যাম্পে তাদের সন্তানদের বাংলা পাঠ্যবই শিক্ষা দিচ্ছে। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজী এবং বার্মিজ ভাষায় শিক্ষিত পৃথক শিক্ষক নিয়োগদানের নিয়ম থাকলেও তারা গোপনে বাংলাপাঠ্যবই শিক্ষা দিতেও কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার, উখিয়া, রামু ও টেকনাফের বিভিন্ন আরবী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে শত শত রোহিঙ্গা সন্তান। ক্যাম্পে আশ্রিত অভিবাবকরা কৌশলে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছে তাদের সন্তানদের। নূরানী মাদ্রাসা ও লার্নিং সেন্টার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভর্তি হতে চলেছে দাখিল মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজে। পরিচয় গোপন রেখে ক্রমান্বয়ে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ছে বহু রোহিঙ্গা সন্তান। পুরনো রোহিঙ্গা নেতা ইদ্রিছ জিহাদী, শাইখ ছালামত উল্লাহ, মৌলবি রহিম উল্লাহসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার ইন্ধনে বাংলা শিক্ষার দিকে আগ্রহ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের। বিশ্লেষকরা বলেন, ইতোপূর্বে (বিএনপি শাসনামলে) পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বিশাল অংশ বাংলাদেশী নাগরিক বনে গেছে। অবৈধ কারবার করে এবং রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশী অর্থ এনে বর্তমানে তারা কোটিপতি। কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে তারা গড়ে তুলেছে সুরম্য অট্টালিকা।

সূত্র আরও জানায়, সশস্ত্র আরসা ক্যাডারদের ইন্ধনে মিয়ানমারের সামরিক শাসকের ওপর বিশ্বাস ও ভরসা করতে পারছে না উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। ফলে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার মতো চিন্তা-ভাবনা করে তাদের পরিচয় গোপন রেখে কৌশলে ছেলেমেয়েদের বাংলা শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার কলাকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্তানদের। শবনম বেবী একজন রোহিঙ্গা নারী। কক্সবাজারের টেকনাফ শামলাপুর ২৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস ছিল রোহিঙ্গা শবনম বেবীর পরিবারের। মিয়ানমার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এমনটা দাবি তার। রোহিঙ্গা ব্লক মাঝি ইউনুছের মেয়ে শবনম জীববিজ্ঞানে চট্টগ্রাম এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করতে পড়ালেখা করছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে বাংলাদেশে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছে শবনম। জীববিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে বেবী। অন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও রোহিঙ্গাদের বহু সন্তান লেখাপড়া করছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রী পেয়ে ও ইয়াবা-স্বর্ণের বারের কারবার করে আয়েশী জীবন পার করছে। নিজ দেশ মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে গেলে পরিশ্রম করে বা সংগ্রাম করেই বাঁচতে হবে। তাই বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা বসতির বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা চতুর ও কৌশলী। এরা নিজেদের প্রয়োজনে শত শত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। যে কোন অপরাধ করতে পারে রোহিঙ্গারা। এ দেশে ঠাঁই পেয়ে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাচ্ছে না রোহিঙ্গারা। জনকন্ঠের সৌজন্যে

পাঠকের মতামত

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কক্সবাজারে ডিজিটাল ডিভাইসসহ ২ পরীক্ষার্থী আটক

কক্সবাজারের অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসসহ বশির আহমদ এবং মোবাইল ফোনসহ তৌহিদুল ইসলাম ...

কক্সবাজারে আজরাইল গ্রেফতার

কক্সবাজারের মহেশখালীর আলোচিত সিরিয়ার কিলার মো. লোকমান ওরফে আজরাইলকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। দীর্ঘ দুই দশক ...