উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/০৩/২০২৩ ৩:০৫ পিএম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ভুল তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার হিড়িক পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে শুনানি চলছে।

জানা যায়, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ বন্ধে সদর ইউনিয়নের শুধু দুই নম্বর ওয়ার্ডেরই ৪২২ জন রোহিঙ্গাকে ভোটারতালিকা থেকে বাদ দিতে ২০২১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনে আলাদা আবেদন করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ। সেই তালিকায় যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে উল্টো তাদের সন্তানদের ভোটার করার জন্য পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে রোহিঙ্গা ও বাঙালিদের মধ্যে এক ধরনের মুখোমুখি অবস্থা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাসমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা তৎপর তাদের ভোটার করতে, আর বাঙালিদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা চাচ্ছেন বিধি লঙ্ঘন করে যাতে তারা ভোটার হতে না পারেন।

ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আবেদনের পর উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় ৭৭ জনের নাম তালিকা থেকে স্থগিত করা হয়েছে প্রথম দফায়। পরবর্তীকালে অন্যদের নাম বাতিল করার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো স্থগিত হওয়া ৭৭ জনকে কীভাবে ফের ভোটার করা যায়, তা নিয়ে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির আবেদন করা হয়। এ শুনানি কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা। সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরমান ভূঁইয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোমেন শর্মা সময় সংবাদকে বলেন, ‘৭৭ জনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা আছে, কিন্তু বাদ পড়েছে বিভিন্ন কারণে। আমরা আসলে এখন যাচাই-বাছাই করে দেখবো, নাগরিকত্ব পাওয়ার যে ১৬টি ক্রাইটেরিয়া আছে, তাদের তা আছে কি-না। তাদের বাবা-মা কোন জায়গার নাগরিক, তাদের স্থানীয়ভাবে জায়গা জমি আছে কি-না। এসব ক্রাইটেরিয়া অনুসারে যাচাই করা হবে। এজন্য একটি বিশেষ কমিটি আছে। এখানে এনএসআই, ডিজিএফআই সবাই আছে। তারাও তদন্ত করছেন।’

তিনি বলেন, ‘যে এলাকা থেকে ভোটার হওয়ার আবেদন করা হয়েছে, সেই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সুপারিশ আমরা বিশেষভাবে বিবেচনা করি। আমরা সরকারি কর্মকর্তা। স্থানীয়দের সবাইকে অতটা চিনি না। চেনার কথাও না। আবেদনকারী এলাকার বাসিন্দা কি-না, তা তো আমরা জানতে পারবো না। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে আমরা মূলত ভ্যারিফাই করি। তারা যদি প্রত্যয়ন দেন যে সে এ এলাকার নাগরিক, তাহলে আমরা তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি। কিন্তু তারা যদি প্রত্যয়ন না দেন, তাহলে বিশেষ কমিটির সভাপতি হয়েও আমার কিছু করার থাকবে না।’

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য নুরুল আবছার সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান যেসব রোহিঙ্গাকে ভোটার করে গেছেন, তাদেরই সন্তানরা সেই সুযোগে ভোটার হচ্ছেন। তাদের বাবা-মাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না দেয়ায় রোহিঙ্গা হলেও, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকায় তাদের নাগরিক সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ সুযোগে প্রকৃত রোহিঙ্গা হয়েও, তাদের সন্তানরা বাংলাদেশের নাগরিক হচ্ছেন।’

এ সময় কথা হয় অভিযোগকারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাঙালি হয়েও শুধু রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিরোধিতা করার কারণে আমরা কোনঠাসা। ২০২১ সালে শুধু আমার ওয়ার্ড থেকে ৪২২ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে নির্বাচন কমিশন, ঢাকা অফিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। সেই তালিকা থেকে যাচাই বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ৭৭ জন রোহিঙ্গাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন বাকি রোহিঙ্গাদের বাদ না দিয়ে উল্টো ওই ৭৭ জনকে তালিকাভুক্তির ষড়যন্ত্র চলছে। আজ সেই ৭৭ জনকে তালিকাভুক্তির শুনানি হচ্ছে। জানি না, এই শুনানির মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে কি-না।’

বান্দরবান জেলা নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের উপজেলা বিশেষ কমিটি আছে, তারাই শুনানি করছেন। সত্য-মিথ্যা বের করছেন স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা।’

নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার হিড়িক পড়ছে কি-না; জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন মোটামুটি ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানে একটা ঝুঁকি আছে। তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের কাছে এতটুকুই তথ্য আছে। তবে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। সবশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদে আমরা কঠোর ছিলাম। কিন্তু তাদের (যাদের নাম ভোটার তালিকায় স্থগিত হয়েছে) দাবি, তাদের বাবা-মা ভোটার ছিলেন, তাদের কেন নাগরিকত্ব দেয়া হবে না। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তারা আবেদন করেছেন। তারা বলছেন, আমরা স্থানীয় নাগরিক, আমাদের রোহিঙ্গা বলে বাদ দেয়া হচ্ছে। বাদ দেয়া মানে স্থগিত রেখেছে। তাদের বিষয়ে আজ শুনানি হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...