ডেস্ক নিউজ - ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিরোধিতাকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া মাত্রই পরিদর্শনের জন্য মানবাধিকারকর্মীদেরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ভাসানচর কোনও আটককেন্দ্র নয়। কক্সবাজার থেকে মাত্র ১০ শতাংশ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে এবং সেখানে তাদের দাতা সংস্থাগুলোর ত্রাণের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে না, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত জীবন কাটাবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। আর তার আগে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সবমিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া, জাতিসংঘ,অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল,যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তটিরও সমালোচনা করছে অ্যামনেস্টিসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এ ব্যাপারে আল জাজিরার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, ভাসানচরে সরকারের তহবিল থেকেই ব্যয় করতে হচ্ছে, এর জন্য কোনও বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না, নতুন এ পুনর্বাসন কেন্দ্র কেমন হবে? জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটা কোনও আটককেন্দ্র নয়। আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এর জন্য সহায়তা ও সমর্থন চাইনি। কারণ, প্রথমে আমরা এটি নির্মাণ করতে চাই। অ্যামনেস্টি কিংবা অন্য যেকোনও মানবাধিকার সংগঠনই হোক না কেন, তাদেরকে আহ্বান জানাবো, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর তারা যেন তা (ভাসানচর ক্যাম্প) দেখে যায়।’
শাহরিয়ার আলম জানান, দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলাকে প্রাধান্য দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাসানচরকে সাগর থেকে সুরক্ষিত রাখতে বাঁধ নির্মাণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সেখানেই বেশিরভাগ টাকা খরচ হচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য কংক্রিট দিয়ে ইউ-আকৃতির গুচ্ছ-গ্রাম নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটিতে ৮০০ মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে। সেখানে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধী একটি আশ্রয় শিবির, একটি স্কুল, একটি পুকুর (সেখানে তারা মাছ ধরতে পারবে) এবং লালন-পালনের জন্য গবাদি পশু দেওয়া হবে। পাশাপাশি তারা শাক-সবজিও উৎপাদন করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘সুতরাং, এখন তারা যেসব ক্যাম্পে আছে, সেগুলো থেকে এ জায়গাটা অনেক বেশি ভালো হবে। এখনকার শিবিরে তাদের কোনও কাজ নেই, তারা শুধু সাহায্য সংস্থাগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করে। ভাসানচরে তারা জীবন-যাপন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু সেখানে কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১০ শতাংশ যাবে।’
সমালোচনাকারীদের অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যারা সমালোচনা করছেন তাদেরকে আমি পরামর্শ দেব, আমরা শিবিরটির উদ্বোধন না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। আশাকরি রোহিঙ্গাদেরকে স্থানান্তরিত করার আগে অক্টোবরে আমরা বন্ধুদেরকে সেখানে আমন্ত্রণ জানাতে পারব।’
এ পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থায়ী বসতি হয়ে যাবে কিনা- এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন এক বছর কিংবা দুই বছর বা তিন বছর অথবা ততোধিক সময় ধরে থাকতে পারে তা মাথায় রেখে এ নির্মাণ কাজ চলছে।’ রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে গেলে ওই অবকাঠামো বাংলাদেশিদের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালেই বঙ্গোপসাগরে ভাসানচর দ্বীপটির উৎপত্তি। ২০১৫ সালে প্রথম এই চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনার কথা বলার সময়ই অনেক সমালোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরাও ওই দ্বীপে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুযোর্গের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ঘুর্ণিঝড় বা বন্যায় মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কাও জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে। প্রথম ধাপে পুনর্বাসনের এই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হলেও আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর আবারও এটি হাতে নেওয়া হয়। গত বছর ডিসেম্বরে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হবে। তাতে পুনর্বাসন করা হবে এক লাখ ৩ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে একনেকে ২৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।