প্রকাশিত: ০৪/০৬/২০২২ ১০:১৬ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের আটক করে সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটির প্রশাসন। মিয়ানমারে যাওয়ার পর সেসব রোহিঙ্গারা পুনরায় পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু শহরে বসবাসরত জাতিসংঘের নিবন্ধনধারী শরণার্থীসহ ১৭০ রোহিঙ্গাকে গত বছরের ৮ মার্চ আটক করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের রাখা হয় জম্মুর নিকটবর্তী হিরানগর জেলে। আটকের এক সপ্তাহ পর সেসব রোহিঙ্গাকে মণিপুর প্রদেশের তেংনৌপাল জেলার সীমান্ত শহর মোরেহতে অবস্থিত সীমান্ত ট্রানজিট দিয়ে মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের তমুতে দায়িত্বরত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) হাতে তুলে দেয় ভারতীয় পুলিশ।

আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারে ফেরত গেলেও সেখানে কিছুদিন বসবাসের পর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন তারা। আশ্রয় নেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে।

এদের একজন আলী হোসেন (৩৫)। যিনি দশ বছর জম্মুতে বসবাসের পর ফেরত গিয়েছিলেন মিয়ানমারে। সম্প্রতি তিনি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে চলে এসেছেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বজনদের কাছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আলীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। আলী বলেন, ‘জম্মুতে আমাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। আমরা কোথায় যাব? দেশে গিয়েও শান্তি নেই, বাংলাদেশ আমাদের জন্য নিরাপদ। তাই এখানে চলে এসেছি।’

হাসিনা বেগম (৩৭) নামে এক রোহিঙ্গা নারী জম্মুতে একা আটক হয়ে ফেরত যান রাখাইন প্রদেশে। তাঁর স্বামী সন্তানেরা জম্মু থেকে পালিয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে চলে আসেন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পরিবার থেকে এক বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর হাসিনাও চার লাখ কিয়াট সংগ্রহ করে সম্প্রতি আলীর মতোই বাংলাদেশে এসেছেন।

দীর্ঘদিন নিজের তিন সন্তানদের থেকে আলাদা হওয়ার পর তাদের কাছে আসা হাসিনা বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে পারায় আমি খুশি। এখন এখানেই থাকব তাদের নিয়ে।’

অন্যদিকে, জম্মুতে আটক-নিপীড়ন শুরু হওয়ার পর সেখানে বসবাসরত ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা শহরটি ছেড়ে পালাচ্ছেন, যাদের অনেকেই দালাল ধরে পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ভারত থেকে পলাতক দুই রোহিঙ্গা পরিবারের সাত সদস্যকে আটক করে ১৪ এপিবিএন। আটকদের ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) কার্যালয়ের মাধ্যমে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠানো হয় বলে জানান ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাঈমুল হক।

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভারত থেকে সীমান্ত হয়ে ক্যাম্পে পালিয়ে আসার কথা স্বীকার করেছে আটক দুই পরিবার, যাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।’

ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একজন মোহাম্মদ তাহির (৩৩) বলেন, ‘জম্মুতে থাকা রোহিঙ্গারা অশান্তিতে আছে। জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড থাকার পর ও সেখানকার পুলিশ রোহিঙ্গাদের ধরে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা তাদের ভয়ে কুতুপালং পালিয়ে আসছি, আমার মতো অনেকেই চলে এসেছে এখানে।’

ভারত থেকে সম্প্রতি বেশ কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ২৭ মে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা’ সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির ১৭তম সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের সে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। একই সঙ্গে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যাতে বাইরে আসতে না পারে সেদিকেও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত তিনজন এপিবিএনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে কমপক্ষে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে, যারা ভারত থেকে পালিয়ে এসেছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে—ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লিসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৮ হাজার। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মতে নিবন্ধিত ছাড়াও কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে দেশটিতে

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে আজরাইল গ্রেফতার

কক্সবাজারের মহেশখালীর আলোচিত সিরিয়ার কিলার মো. লোকমান ওরফে আজরাইলকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। দীর্ঘ দুই দশক ...

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...