উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭/০৩/২০২৩ ৭:৩০ এএম

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা। কুলসুম বিবি নামে এক বৃদ্ধা জানিয়েছেন, কথিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু এক স্থানে না, একযোগে অন্তত পাঁচটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
সোমবার (০৬ মার্চ) একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ক্যাম্পে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। আর বসতিতে নিজ হাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, এক রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে যা আমি ভিডিও করেছি। শুধু এক স্থানে বেশ কয়েকটি স্থানে বসতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়।
এদিকে বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ও ডি ব্লকের দুটি ঘর থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানান রফিক নামের এক রোহিঙ্গা। এর পরপরই বিভিন্ন ক্যাম্পে বিচ্ছিন্নভাবে আগুন দেখা যায়। এ কারণে ভয়াবহতা বেড়েছে। এটা পুরোটাই নাশকতা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৫ থেকে ৩০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় তারা এ আগুনকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন।
রবিবার বিকেল ৩টার দিকে বালুখালীর ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। টানা তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও পুড়ে যায় ২ হাজার ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হন ১২ হাজার রোহিঙ্গা। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়। সোমবার সকাল থেকে তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। আগামি ৩ কর্মদিবসের মধ্যে অগ্নিকান্ডের কারণ বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
আগুনের সূত্রপাতের মূল কারণ এখনও জানা না গেলেও একে রহস্যজনক বলছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি জানান, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা তিনি দেখেছেনও। এই ভিডিওর সূত্র ধরে তদন্তের কাজ চলছে।
এদিকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্প-১১ এর সিআইসি অফিসে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর একটি বৈঠক হয়। যেখানে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি (এফডিএমএন) মো. জামিল হোসেন ও অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বের হয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি (এফডিএমএন) মো. জামিল হোসেন বলেন, রবিবার আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স ১৩-১৪ বছর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হবে। আর অগ্নিকান্ডে হলে আগুন নেভানোর জন্য নানা অসুবিধা ও পানির সংকটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।
অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা বলেন, সোমবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে সহযোগিতা করা শুরু করেছে। বাঁশ-তাঁবু দিয়ে রোহিঙ্গাদের বসতি করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ বা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে, যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ কর্মী কাজ করছেন।
এদিকে সোমবার বেলা ৩টার দিকে দেখা যায়, বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্প জুড়ে শুধু পোড়া গন্ধ ও আগুনের ক্ষত। ক্যাম্পের কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও ধোঁয়া-ধোঁয়া পরিবেশ। পোড়া মাটিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন বসতি তৈরি শুরু করেছে প্রশাসন ও সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি খাদ্য সরবরাহেও ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা।
আইওএমের কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানিয়েছেন, তারা সোমবার সকাল থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী তাঁবু দিয়ে পুণর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা আবদুল মালেক জানান, আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়। দৌড়ে ঘর ছেড়ে পালাতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিতে পারেননি। সোমবার সকালে তাকে ২০টি বাঁশ ও একটি বড় তাঁবু দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে এখন ঘর বানাচ্ছেন।
আয়েশা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, তাদের খাবারের জন্য বিস্কুট ও রান্না করা ভাত দেওয়া হয়েছে। ঘর করার কাজ করছেন তিনি।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ঘর করে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, পুড়ে যাওয়া স্থাপনার মধ্যে ৩৫টি মসজিদ-মক্তব, দুটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি হেল্প পোস্ট, একটি যুবকেন্দ্র, একটি নারীবান্ধব কেন্দ্র, একটি শিক্ষাকেন্দ্র, একটি শিশুবান্ধব কেন্দ্র ও একটি মানসিক পরিচর্যা কেন্দ্র পুড়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোনো ধরনের হতাহত না হলেও এই আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে বলে দাবি করেন কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও দেখে বোঝা যায়, এই আগুন পরিকল্পিত নাশকতা। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। ওই সময় ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন পাঁচ শতাধিক। পুড়ে যায় ৯ হাজারের বেশি ঘর। এবার আহত শূন্য আগুন বলে দেয় আগুন দেওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের পালানোর প্রস্তুতি ছিল।’
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা সদস্য রয়েছেন। সোমবার সকাল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। আগামি ৩ দিনের মধ্যে ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের কারণ বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...