বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। দেশের পর্যটন রাজধানী হিসেবে খ্যাত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর স্থান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতা এখন ভিন্ন। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে এ শহরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যত্রতত্র স্থাপনা, অযত্ন-অবহেলা এবং নাজুক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা এখন রূপ নিয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।
খুরুশকুল সেতু, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, লালদীঘি ও গোলদীঘিরপাড়সহ অনেক স্থানে ময়লার স্তূপ সৃষ্টি হয়ে চলাচলে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের। বিশেষ করে, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত খুরুশকুল সেতু যেখানে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সেখানে সেতুর একপাশে শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার স্তূপ জমে আছে। অন্যদিকে, সেতুর অপর পাশে রয়েছে বেসরকারি মালিকানাধীন খেজুরবাগান, ফিশারিজ প্রজেক্ট, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, চৌফলদণ্ডী ব্রিজ এলাকা ও কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিতভাবে বর্জ্য সংগ্রহ না করায় সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে।
স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এলাকাবাসী এই ময়লার ভাগাড়ে অতিষ্ঠ। এখান থেকে নানা রোগ ছড়াচ্ছে। শুধু নামেই যদি পর্যটন নগরী হয়, তাতে লাভ কী? জনভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত।
কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজ। তবে এর মধ্যে অল্প কয়েকটিতে রয়েছে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি)। প্রায় সব স্থাপনাতেই মল-বর্জ্য সরাসরি ফেলা হয় বাঁকখালী নদীতে, যা পরে বঙ্গোপসাগরে মিশে পরিবেশ দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছে।
সবুজ আন্দোলন কক্সবাজারের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে। কিন্তু চারদিকে যেভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং এসটিপির অভাব রয়েছে, তাতে স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে সরকার কক্সবাজার সৈকতকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী, সৈকতের বেলাভূমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালে হাইকোর্টও ইসিএ এলাকায় সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রশাসনের দুর্বলতায় এই আইন বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। কলাতলী ও লাবণী পয়েন্টে নতুন হোটেল-মোটেল তৈরি হচ্ছে, যার বেশিরভাগেই নেই এসটিপি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, ৩৫০টির বেশি হোটেল-মোটেলকে এসটিপি স্থাপনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে জায়গার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই তা করতে পারছে না। এ সমস্যা সমাধানে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সেন্ট্রাল এসটিপি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আ. মান্নান বলেন, ইসিএ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণ চলবে। কক্সবাজারকে দূষণমুক্ত করতে প্রতিটি স্থাপনাতেই এসটিপি বাধ্যতামূলক করা হবে।
সম্প্রতি বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ইসিএ এলাকায় দখল ও উচ্ছেদ এখন অনেকটা টম অ্যান্ড জেরির মতো। কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কক্সবাজার শুধু দূষিতই হবে না, তার পর্যটন আকর্ষণও হারাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্সবাজার সৈকতকে বাঁচাতে হলে দ্রুত কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। একই সঙ্গে পুরনো হোটেল-মোটেলগুলোতে পরিবেশবান্ধব সংস্কার এবং এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে।