উখিয়া নিউজ ডটকম::
একটি নতুন সূর্য তারি সাথে পৃথিবীর মানুষের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির হিসাব শুরু হবে নতুন করে। না চাইলেও জীবনের বহু হিসাব নিকাশ না চুকিয়েই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে ২০১৭। আর আজ ১ জানুয়ারী সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ২০১৮। তবে ফেলে আসা বছরে শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব জুড়েই আলোচনায় ছিল বিশ্ব বিখ্যাত পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বিশেষ করে ২৫ আগষ্টের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ভরন পোষন থেকে শুরু করে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং খাদ্য চিকিৎসা সহ সব কিছু নিপুন ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারায় সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত ছিল বাংলাদেশ সাথে কক্সবাজার। পরিসংখ্যান মতে যে সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা ধর্মগুরুরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোন দিন বাংলাদেশে আসেনি তারাও ঘুরে গেছেন কক্সবাজারে। এছাড়া বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০ টি দেশের ২ হাজারের বেশি নাগরিক কক্সবাজারে অবস্থান করছে এতে কক্সবাজারের মর্যাদা আরো বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠ্যরা।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান এরআগেও বহুবার আমরা নির্যাতিত মায়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিলাম তবে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভিন্ন, চলতি বছরের ২৫ আগষ্টের কয়েক দিন আগে মায়ানমার সেনাবাহিনী কতৃক বর্বর নির্যাতন গণহত্যার কারনে প্রাণ বাচাঁতে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা, তখনি অনেক ক্ষমতাধর দেশ যখন এই বিপন্ন মুসলিম রোহিঙ্গাকে আশ্রয় নেওয়াতো দূরের কথা তারা তাদের সিমান্ত সীল করে দিয়েছিল,ঠিক সেই মুহুর্তে বিশ্ববাসিকে অবাক করে দিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী মানবতদরদী নেত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে বুকে টেনে নিয়েছেন। বাংলাদেশে সিমান্ত খুলে দিয়ে ৮ লাখের বেশি মুসলমানকে প্রাণে বাচিঁয়ে তিনি প্রমান করেছেন তিনিই মুসলিম বিশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কক্সবাজারের ১২টি পয়েন্ট দিয়ে লাখে লাখে রোহিঙ্গারা আসছিল তখন বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে শংসয় প্রকাশ করেছিল, এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য নেতৃত্বে একজন রোহিঙ্গাও না খেয়ে মরে নি এবং কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যায় নি। এবং এখনো সবাই নিরাপদে আছে। এতে বাংলাদেশের মর্যাদা বর্হিবিশ্বে বহুগুন বেড়েছে একই সাথে কক্সবাজারের গুরুত্ব বেড়েছে। আগে যে সব দেশের নাম আমরা শুনেছিলাম টেলিভিশনে এখন সেই সব দেশের সরকার প্রধানরা কক্সবাজারে এসে ঘুরে গেছেন এতে অবশ্যই কক্সবাজারের মর্যাদা বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআর এর ঢাকাস্থ কর্মকর্তা মোঃরাহাত নুর বলেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতির শুরুর দিকে অনেক দেশের দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা সত্যিকার অর্থেই শংসয় প্রকাশ করেছিল আসলেই বাংলাদেশ পারবে কিনা এত মানুষে কে ম্যানেজ করতে তাদের ভরন পোষন করতে। এখনে সেই সব দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাই বাংলাদেশের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন অনেক বিদেশিদের কাছে কক্সবাজারের নাম এখন মুখস্ত। তারা এখন অনেক আমাদের সাথে কথা বলতেই আগে জানতে চায় কক্সবাজারের কোন খবর আছে কিনা। সত্যিকার অর্থে এখন বিশ্বজুড়েই আলোচনায় আছে কক্সবাজার। তিনি বলেন সত্যি বলতে বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর রাজ পরিবারের মানুষজন্ও এখন কক্সবাজারের নাম জানে এবং কক্সবাজার সম্পর্কে অবগত।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন ২৫ আগষ্টের পরে যখন বিপুল হারে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছে তখন আমাদের অনেক পরিচিত লোকজন ফোন করে বলেছিল আমরা আর বেশিদিন স্থায়ী হবো না। আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে এবং এখানকার পরিবেশ প্রকৃতি সব কিছু নস্ট হয়ে যাবে ইত্যাদি। এর মধ্যে পরিবেশগত দিকের কিছু বিষয়ে সত্যি হলেও এখন যে আমরা গর্বিত তা আর কেউ অস্বিকার করেনা। নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়া এত সহজ ছিল না। কিন্তু সরকারের চেস্টায় সেটা সফল হয়েছে কিন্তু এখানে স্থানীয় সাধারণ মানুষের একটি বিশাল অবদানআছে তারা যে ধর্য্য ধরেছে এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে সেটা কোন ভাবেই অস্বিকার করা যাবে না। তিনি বলেন যখনি টেলিভিশন খুলি প্রধান শিরোনাম থাকে কক্সবাজারের। এটা শুধু বাংলাদেশের নয় বিবিসি,সিএনএন,আলজাজিরা সহ অনেক শক্তিশালী গনমাধ্যমে প্রধান শিরুনাম থাকে কক্সবাজার কে নিয়ে। এখানে একটি বিষয় সব সময় আলোচনা করতে শুনেছি সেটা হলো মানবিকাত। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি এত বেশি মানবিক হবে সেটা বিশ্বের মানুষ কোন দিন ধারনা করতে পারে নি। তিনিবলেন বাংলাদেশ এবং কক্সবাজার এখন মানবিকতার বিশাল এক উদাহরণ যা যুগে যুগে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুস সালাম বলেন আমার চাকরী জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং সময় পার করেছি এবং এখনো করছি। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে সামাল দেওয়া এটা খুব বেশি সহজ ছিল না। সরকারের উর্ধতন মহলের নির্দেশে আমরা দিনরাত মাঠে ছিলাম আমি নিজে রোহিঙ্গারা শাহপরীরদ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। তখন সত্যি আমরা চিন্তাই ছিলাম এত মানুষের মধ্যে যদি কোন রোগ হয় সেটাতো মহামারি হয়ে উঠবে। কিন্তু সরকারের প্রচেস্টায় এ পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। বরং তারা নিজ দেশে দীর্ঘ সময়ে সে নুন্যতম স্বাস্থ্যসেবা গুলো পায় নি সেটা অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পেয়েছে।বর্তমান কক্সবাজারে প্রায় ২০ টি বেশি দেশের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করছে এছাড়া আরো অনেক সহযোগি সংস্থা কাজ করছে সে অনুসারে সব মানুষের মুখে এখন কক্সবাজারের নাম মুখস্ত এবং কক্সবাজারের মানুষ এবং এখানকার পরিবেশ নিয়ে তারা খুবই সন্তুস্ট। অনেক বিদেশির সাথে আমার আলাপ হয়েছে তারা বলেছে এখানকার যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সেটা অন্য কোথাও নেই এমনি তাদের নিজ দেশেই এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশ নেই। তবে তারা এটাও বলেছে এই সম্পদকে ঠিকমত ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন অবশ্যই এখন টক অফ দ্য ওয়াল্ড কক্সবাজার। কারন কক্সবাজারকে ঘিরে এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিও অনেকটা চাঙ্গা ভাব এসেছে। আমার জানা মতে বিশ্বের ৩০ টি দেশের অন্তত ২ হাজার বিদেশী নাগরিক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছে যারা প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কক্সবাজারকে তুলে ধরছে তাদের নিজ দেশের কাছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক বিদেশী নাগরিকের সাথে কথা বলেছি তারা বলেছে কক্সবাজারের মানুষের এই মানবিকতা পৃথীবির ইতিহাসে একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত এবং এখানে থাকা বা নিরাপত্তা নিয়ে তারা খুব সন্তুস্ট। তিনি বলেন আমার দেখা মতে বিশ্বে অনেক শক্তিশালী গনমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এখন কক্সবাজারে কাজ করছে এতে বিশ্বের কাছে কক্সবাজার উপস্থাপন হচ্ছে। এছাড়া খ্রীস্টান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, তুরস্কের রানী,রাস্ট্রপতি,জর্ডানের রানী,মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী, সহ যে সব বিশ্ব নেতারা কক্সবাজারে এসেছেন তারা নিশ্চয়ই কক্সবাজার নিয়ে তাদের দেশে আলোচনা করবে। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। যদি রোহিঙ্গা ফেরতও যায় তাহলেও সেই সব বিশ্বনেতারা কক্সবাজারকে মনে রাখবেন।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম বলেন আমার কাছে অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়াল যত ফোন বা চিঠি আসে তার বেশির ভাগই বিদেশ থেকে। যারাই রোহিঙ্গা বিষয়ে জানে তারাই কক্সবাজারকে জানে সে হিসাবে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ছিল কক্সবাজার এটা মোটেও মিথ্যা নয়। এখনো প্রতিদিন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে গুরুত্ব বাড়ছে কক্সবাজারের । এখানে একটি কথা সব সময় উঠে আসে সেটা হচ্ছে মানবিকতা,স্থানীয় মানুষএবং এখানকার প্রশাসন এত বেশি রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক ছিল তা বিশ্বের কাছে এখন দৃষ্টান্ত হয়ে দাড়িয়েছে। আমি আশা করবো এখন যে সুনাম আমার অর্জন করেছি সেটা যেন শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারি। এবং বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত মানুষ রোহিঙ্গারা সম্মানের সাথে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারে এটাই হবে নতুন বছরের প্রত্যাশা।