স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০/১১/২০২২ ১:৫০ পিএম

বিশ্বকাপ দোরগড়ায়। যে কারণে আলোচনা এখন তারকা ফুটবলারদের নিয়ে। কারা মাতাবেন এবারের বৈশ্বিক আসর। সেই সুপারস্টারদের কাতারে রয়েছেন ফুটবল জাদুকর ফরওয়ার্ড লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, কিলিয়ান এমবাপেরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন!

লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা

গোল তার কাছে যেন মুড়ি মুড়কি! পায়ের জাদুতে বলকে কথা বলাতে পারেন যেন তিনি! চলতি বছর আর্জেন্টিনার হয়ে পাঁচ ম্যাচে পেয়েছেন ১১ গোলের দেখা। গত মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে একটি, পরের ১০টি করেছেন চার প্রীতি ম্যাচে। এর মধ্যে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ৫-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে সবগুলো গোলই মেসির! কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, এরনান ক্রেসপো, সার্জিও আগুয়েরো, গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় পেছনে ফেলেছেন অনেক আগেই। সবশেষ ‘গাবিগোল’ খ্যাত বাতিস্তুতার ৫৬ গোলের মাইফফলক পেরিয়ে তিনি বসেন সিংহাসনে। বর্তমানে এ চূড়াকে রীতিমতো সপ্তাকাশে তুলে নিয়েছেন। আকাশী নীল-সাদা জার্সিতে খেলা ১৬৫টি ম্যাচে ৯১ গোল এই মহাতারকার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন মেসির চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল আলি দাইয়ি (১০৯টি) ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (১১৭টি)। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে আর্জেন্টিনার কাতারে যাওয়ার পেছনে দারুণ অবদান মেসির। কেবল কি আর্জেন্টিনা, ক্লাব পর্যায়ে পিএসজির দুর্বার গতিতে ছুটে চলার পেছনেও মেসির ভূমিকা অপরিহার্য। চলতি মৌসুমে লিগ ওয়ানে ১২ ম্যাচে লক্ষ্যভেদ করেছেন ৭ বার; অ্যাসিস্ট ১২টি।

ফলে মেসিকে নিয়ে প্রত্যাশাও বাড়ছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলার পথে ৪টি গোল করেছিলেন তিনি, জিতেছিলেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ব্যর্থ সেই বিশ্বকাপে মেসি মাত্র একটি গোল করেছিলেন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পর্তুগাল

মাঠের লড়াইয়ে সময়টা মোটেই ভালো কাটছে না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর । বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মাত্র একবার জালের দেখা পেয়েছেন। ইউরোপা লিগে মাত্র দুইবার। এরই মধ্যে ইউনাইটেডের কোচ এরিক টেন হাগের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন।

কিন্তু প্রসঙ্গ যখন পর্তুগাল, তখন রোনালদোই সেরা নেতা, সেরা গোলমেশিন এবং সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। তিনি পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, ১৯১টি। কেবল পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতাই নন, আন্তর্জাতিক গোলের হিসাবেও রোনালদো চূড়ায়। গত বছর জুনে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে ফ্রান্সের জালে জোড়া গোল করে ছুঁয়েছিলেন আলি দাইয়ির ১০৯ গোলের রেকর্ড। ওই বছর সেপ্টেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দলের ২-১ ব্যবধানে দুই গোলই করেছিলেন রোনালদো; প্রথম গোলে এককভাবে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। পরের পথচলায় এই সংখ্যাটাকে ১১৭-তে আপাতত উন্নিত করেছেন তিনি।

রোনালদোর কাঁধে সাওয়ার হয়েই পর্তুগাল পেয়েছে সর্বোচ্চ সাফল্য-২০১৬ সালের ইউরো, ২০১৯ সালে নেশন্স লিগের শিরোপা জয়। যদিও বিশ্বকাপের মঞ্চে পর্তুগালকে এখনও প্রত্যাশিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি রোনালদো। ২০০৬ সালে চতুর্থ হওয়া তাই এখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য। এর পরের তিন আসরের মধ্যে দলটি দুইবার শেষ ষোলো থেকে এবং একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। সবশেষ ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে রোনালদোর পর্তুগাল বিদায়ঘণ্টা বাজে শেষ ষোলোয়। এবারের গল্পটা ভিন্ন হবে কি?

নেইমার জুনিয়র, ব্রাজিল

ফরাসি লিগ ওয়ানে (৭ নভেম্বর পর্যন্ত) ১১ গোল করেছেন নেইমার জুনিয়র। রাশিয়ার আসরে ৪ গোল করা এই ফরওয়ার্ড স্বাভাবিকভাবে এবার মুখিয়ে থাকবেন চার বছর আগের পরিসংখ্যান ছাপিয়ে যেতে। এছাড়া অসাধারণ এক প্রাপ্তির হাতছানিও আছে ৩০ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের সামনে। সেলেসাওদের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ৭৫ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নেইমার। মাত্র ২ গোল বেশি নিয়ে তার ওপরে কেবল কিংবদন্তি পেলে।

তাছাড়াও রেকর্ড পাঁচ বিশ্বকাপের সর্বশেষটি ২০০২ সালে জেতা ব্রাজিল এবার মুখিয়ে ষষ্ঠ শিরোপার স্বাদ পেতে। সাম্প্রতিক সময়ে পিএসজিতে এমবাপের সঙ্গে নানা ইস্যুতে বিরোধের কারণে শিরোনামে আসা নেইমারও উন্মুখ হয়ে আছেন বিতর্কের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সাফল্যের আলোয় ভাসতে। এখন যদি শরীরটা ফিট থাকে ঠিকঠাক, ব্রাজিলের পথচলা যদি গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পেরিয়ে ছুটতে থাকে, তাহলে সোনার বুট জুটতে পারেন নেইমারের ভাগ্যেও।

করিম বেনজেমা, ফ্রান্স

আলোচিত সেই ‘সেক্স টেপ’ কাণ্ডে যদি পাঁচটি বছর হারিয়ে না যেত, ফরাসি দলে ব্রাত্য হয়ে না থাকতে হত, তাহলে রাশিয়ার আসরেই হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারতেন বেনজেমা। যে স্বাদ মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাওয়া হয়ে গেছে কিলিয়ান এমবাপের!

কাতারে বিশ্বকাপের মুকুট ধরে রাখার মিশনে আসা ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশমের মূলত এমবাপে ও বেনজেমার কাছে প্রত্যাশা থাকবে বেশি। এ মুহূর্তে দুজনে আছেনও দারুণ ছন্দে। লিগ ওয়ানে ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় নেইমারের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছে এমবাপে। এদিকে লা লিগায় ৫ গোল করেছেন বেনজেমা। বিশ্বকাপে শতদলে বিকশিত হওয়ার অনুপ্রেরণা রিয়াল মাদ্রিদের এই স্ট্রাইকার পেতে পারেন সবশেষ ব্যালন ডি’অর জয়ের কারণেও।

হ্যারি কেন, ইংল্যান্ড

এমন অনেক গোলমেশিন আছে, যারা অল্প ম্যাচেই সেরে রাখতে পারেন নিজেদের কাজ। এই তালিকায়, স্পেনের আলভারো মোরাতা, পোল্যান্ডের রবার্ট লেভানদোভস্কি, বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু, নেদারল্যান্ডসের মেম্ফিস ডিপাইরা ঠাঁই পাবেন অনায়াসে। এবং তাদের সঙ্গে অবশ্যই থাকবেন ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন।

থ্রি লায়ন্স’-এর হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা ওয়েইন রুনির চেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেনের গোল মাত্র দুটি কম; ৫১টি। এই দুই গোলের ব্যবধান তো বটেই, গোল্ডেন বুটের হিসাবও টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ফরওয়ার্ড মিলিয়ে নিতে পারেন অনায়াসে। গত বিশ্বকাপে কেন তা রীতিমতো করে দেখিয়েছেন। এ কারণেই হয়ত, বাজিকরদের কাছে মেসি-নেইমার-রোনালদোর চেয়েও এগিয়ে কেন!

কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফ্রান্স

মাত্র ২৩ বছরে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের তকমা পেয়েছেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে জিতেছেন বিশ্বকাপ। কিংবদন্তি পেলের পর দ্বিতীয় কিশোর হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার রেকর্ড তাঁর দখলে। পেলের পর এমন কিছু করে দেখাতে শুধু পেরেছেন তিনিই। ২০১৮ বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছেন পিএসজির এই ফরওয়ার্ড। কাতার বিশ্বকাপেও তাই ফ্রান্সকে পথ দেখাতে পারেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। ১৮ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল, এর পাশাপাশি নামের পাশে আছে ১২টি অ্যাসিস্ট।

কেভিন ডি ব্রুইন, বেলজিয়াম

বর্তমান বিশ্বে একেবারে ‘পরিপূর্ণ’ ফুটবলার ধরতে গেলে সবার আগে নাম আসবে তাঁর। প্লেমেকার, ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার, বক্স টু বক্স, উইঙ্গার এবং সেকেন্ড স্ট্রাইকার—যে পজিশনে দেওয়া হোক না কেন সে নিজের সামর্থ্যের জানান দেবেই। কেভিন ডি ব্রুইনকে আলাদা করেছে তার শারীরিক শক্তি ও বল পায়ে গতি। ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামকে সেমি-ফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখেন ৩১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। বেলজিয়ামের হয়ে ৯৩ ম্যাচে তার গোল ২৫টি। এতেই বোঝায় যায় আক্রমণে সে কতটা বিধ্বংসী। তাই কাতার বিশ্বকাপে তার দিকে আলাদা নজর রাখবে ফুটবলবিশ্বের।

ভিনিসিয়াস জুনিয়র, ব্রাজিল

প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাবেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। দারুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়ের ওপর অনেক প্রত্যাশা ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে গত মৌসুমে ছিলেন দারুণ ছন্দে। করিম বেনজিমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রিয়ালকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগার শিরোপা। এ মৌসুমে এরই মধ্যে করেছেন ১০টি গোল। কাতারেও এই ছন্দ ধরে রাখতে চাইবেন ২২ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড।

পাঠকের মতামত