উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
জলোচ্ছ্বাসহীন তাণ্ডবলীলায় কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চল লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড়টি। মোরা’র এ তাণ্ডবলীলায় জেলায় প্রাণ গেছে নারীসহ পাঁচজনের। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি এবং বিপুল পরিমাণ গাছপালা।
ব্যাপকহারে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় পুরো কক্সবাজার জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে পবিত্র রমজানের সেহরি ও ইফতার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
দু’দিন কাজ করে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হলেও বিদ্যুত বিপর্যয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জেলার সাত উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। বিপুল পরিমাণ খুঁটি ভেঙে যাওয়া ও ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ায় অব্যাহত চেষ্টা চালিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
cox
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) নুর মুহাম্মদ আজম বলেন, জেলার সাত উপজেলায় ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে ট্রান্সফরমার। তাই সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলা স্টেশন ও সাব স্টেশন এলাকার গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পেয়েছে। পুরো জেলায় এক লাখ ৯৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের মাঝে উপজেলা সদর ও সাব স্টেশন এলাকায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। সে হিসেবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে রয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক।
নুর মুহাম্মদ আজম বলেন, নিজস্ব লোকবল ছাড়াও ভাড়ায় লোকজন এনে ভেঙে যাওয়া খুঁটি পুনঃস্থাপন ও মেরামতের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপিত হবে।
cox3
অপরদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকেল নাগাদ টানা কাজ করে সড়কে পড়া গাছপালা সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া।
তার মতে, কক্সবাজারের পেকুয়া, চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, মেধাকচ্ছপিয়া, বদরখালী টেকনাফ, উখিয়ার বালুখালী, রামু ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা গেইটসহ যেসব এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে ছিল সেগুলো সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে। মহেশখালীতে বুধবার সারাদিন কাজ চলছে। কুতুবদিয়াতেও সরাদিন সড়ক পরিচ্ছন্নকরণ কাজ চলে।
পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, উপকূলবর্তী ইউনিয়নগুলোতে ক্ষতির মাত্রা বেশি। এখানে বসবাসরত অধিকাংশই কাঁচা ঘরে বাস করে। যাদের সিংহভাগ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আবাসন নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। গৃহহীন এসব মানুষ আত্মীয় কিংবা পরিচিতদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। একদিকে পবিত্র রমজান অন্যদিকে গৃহহীন হওয়া দু’টিই চরম ভোগান্তির। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে চাল না দিয়ে টাকা কিংবা আবাসন সরঞ্জাম দিলে তারা দ্রুত নিজ আশ্রয়ে চলে যেতে পারতো।
cox4
পুরো জেলার ক্ষতিগ্রস্তরা একই ভোগান্তিতে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, গত ২৯ মে পাওয়া বরাদ্দসহ পূর্বের মিলিয়ে ২৮৪ দশমিক ৭৭০ মেট্রিকটন চাল থেকে ৩০ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া ১১০ মেট্রিক টন জি আর চাল, ৯ লাখ নগদ টাকা বুধবার বিকেল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়ায় ৭০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী, তিন হাজার কেজি চিড়া ও ২০০ কেজি গুড় দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পাঁচ হাজার প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ সেন্টমার্টিন পৌঁছে বুধবার সেখানকার লোকজনের কাছে তা বিতরণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, যা ছিল তাই দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার চেষ্টা করা হয়েছে। গৃহহীনদের আবাসন ও অন্যান্য চাহিদার বিপরীতে আরও বরাদ্দ পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এসব বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।