ফরহাদ ইকবাল::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরো একবছরের বেশি সময় বাকী থাকলেও ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাটে নেমেছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা খুব জোরোশোরে গনসংযোগ শুরু করেছেন। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন । এমনকি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে বেশ কয়েকবার বক্তব্য রেখেছেন। আওয়ামীলীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেককেই ইতিমধ্যে দল থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসন থেকে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিল এবারও তারা মনোনয়ন পাচ্ছেন।
কক্সবাজার- (পেকুয়া-চকরিয়া) এই আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম। পরে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগিতে জাপার মৌলভী ইলিয়াছকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এবারও আসনটিতে জাফর আলম দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটি শুনা যাচ্ছে। তার মনোনয়ন ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল, তিন ১০ম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। দলের নির্দেশে জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি এমপি হতে পারেননি। দলের কাছ থেকে তার মনোনয়ন পাওনা রয়েছে। তাছাড়া প্রচার রয়েছে জাফর আলমের কারণে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পুড়াও আন্দোলনের সময় জামাত-বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেননি। তিনি নাহলে বিএনপি-জামায়ত চকরিয়াতে সাতক্ষীরার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করত। সেই রিপোর্টও নাকি কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। তবে তার মনোনয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে জেলা আওয়ামীলীগের সাথে বিরোধ।
এই আসনে আরো যারা মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন তারা হলেন- জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারাণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজিব।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) এই আসনে এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকারের অনেক গুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তার নির্বাচনি এলাকায়। বিশেষকরে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাঁশখালীসহ অন্যান্য স্থানে যে সমস্যা হয়েছে মহেশখালীতে তা হয়নি। তিনি সবকিছু ভালভাবে হেন্ডেলিং করেছেন। এইসব কারণে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ তার উপর সন্তুষ্ট। তবে তার মাইনাস পয়েন্ট হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অনেক নেতাকর্মীদের সাথে বিরুধের সৃষ্টি হয়।
এই আসনে আরো যারা মনোনয়ন চাইবেন তারা হলেন- জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা উসমান গনি।
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তার সময়ে এলাকাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বন্যা দূর্যোগসহ যে কোন দূর্যোগে তিনি ঝাপিয়ে পড়েন। সদর-রামুর অধিকাংশ ইউনিয়নে তার সমর্থিতরা বর্তমানে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাছাড়া বিএনপির অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এমপি কমলের আনুগত্যে দল ত্যাগ করেছেন। মনোনয়ন ক্ষেত্রে তার প্রধান প্রতিদ্ধন্ধি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক। তার স্বামী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। একই পরিবারে দু’টি পদ নাও দিতে পারে আওয়ামীলীগ। তাছাড়া মোস্তাক চৌধুরীর নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে এমপি কমলের ভূমিকা চোখে পড়ার মত।
এই আসনে আরো যা মনোনয়ন চাইবেন তারা হলেন- জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরী।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি নানা কারণে দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হলেও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন তিনি। সমালোচনার কারণে কেন্দ্রীয় হাইকামান্ড তার উপর কিছুটা বিরক্ত হলেও কিন্তু জনপ্রিয়তার কারণে তিনিই মনোনয়ন পাবেন এমনটিই নিশ্চিত। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই বদি ছাড়া আর যারা মনোনয়ন চাইছেন তাদের দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করা যাবে না বলে মনে করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এই আসনে আরো মনোনয়ন চাইবেন তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহা আলম চৌধুরী প্রকাশ রাজা শাহা আলম, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।