ডেস্ক রিপোর্ট :চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিতে থাকা দুই লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা কম-বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও আপাতত তাদের সরানোর পরিকল্পনা নেই। এরপরও অবস্থা খারাপ হলে কিছু রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। দীর্ঘ দুই মাস ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ের ঢালের বিভিন্ন ব্লক থেকে এসব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এসব রোহিঙ্গাকে নতুন স্থানে সরিয়ে নিতে পর্যাপ্ত বন উজাড় করা হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, ‘চলতি বর্ষা মৌসুমে আমরা দুই লাখ রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলাম। এরমধ্যে চরম ঝুঁকিতে ছিল ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা। আমরা মূলত এই ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়েছি। অন্যান্যদের অবস্থা বুঝে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে। দুর্যোগ বেশি না হলে বাকি রোহিঙ্গাদের তেমন কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
আবুল কালাম আরও বলেন, ‘আমরা জরুরিভিত্তিতে যেসব রোহিঙ্গাদের সরানোর দরকার, মুলত তাদের সরিয়ে নিয়েছি। এজন্য ক্যাম্পের ভিতরে নতুন জায়গা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযোগিতায় এসব রোহিঙ্গাদের সরানো হয়। প্রয়োজনে আরও রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হবে।’
গত ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাগরিকরা দেশটির সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে পালিয়ে আসা চার লাখসহ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ১২টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে পাঁচ হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো গড়ে ওঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে ১০ হাজার একরেরও বেশি বনভূমিতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছেন। তারা বসতি গড়ে তুলতে নতুন নতুন বনভূমি দখল করে গাছ কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে ফেলছেন।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, ‘ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের সরানোর নামে নতুন করে পাহাড় কেটেছে প্রশাসন। রোহিঙ্গাদের এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে সরিয়ে নিয়ে এ কেমন ঝুঁকিমুক্ত করতে চাইছে প্রশাসন? নতুন বসতি তৈরির অজুহাতে এনজিওগুলো যেভাবে পাহাড় কেটে মরুভূমিতে পরিণত করছে, তাতে মনে হয় বনভূমি সংরক্ষণের কেউ এখানে নেই। যেভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে, এতে এনজিওগুলোর স্বার্থসিদ্ধি হলেও এলাকার মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিণতির দিন ঘনিয়ে আসছে। এ থেকে তখন কেউ রেহাই পাবে না। তাই এনজিগুলোর এসব অপকর্ম ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির বলেন, ‘বসতি নির্মাণের জন্য প্রথম দফায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। কোনও ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই এটা করা হয়েছে। এজন্য বন বিভাগের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। আর এখন নতুন করে যেসব পাহাড় কাটা হচ্ছে, সঠিক পরিকল্পনা না নিলে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ বাংলা ট্রিবিউন