বিশেষ প্রতিবেদক::
ইয়াবা অধ্যুষিত টেকনাফের অধিকাংশ গ্রামের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এখন ঘর-বাড়ি ছাড়া। এতে শিশু সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে অধিকাংশ গ্রামের নারীরা। সংসারে আয় রোজগার না থাকায় অর্ধহারে-অনাহারে মানবেতর দিবনযাপন করছে এই অসহায় পরিবার গুলো। পুলিশের হয়রানি আর আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নারী ও শিশুরা। দিনের বেলায় শুধু অনেক পরিবারে কাঁন্না আর আহাজারী চলছেই। অসহায়দের পাশে কেউ না থাকায় কাঁন্নার রোল থামেনা। অচেনা লোককে দেখলেই মুহূর্তেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। বিশেষ করে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। অপরদিকে পুলিশ ভাল মানুষ হোক আর ইয়াবা ব্যবসায়ী হোক ধরতে পারলেই বোনাস! সেক্ষেত্রে পুলিশের টর্সার সেল ও টাকা আদায়ের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন দমদমিয়া ন্যাচারপার্ক। মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃত মরণনেশা ইয়াবা ব্যবসায়ীর কারণে ভাল মানুষের সম্মানহানি ও অযথা টাকা দিয়ে পুলিশের পকেট ভারী করতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায় কোন উপায়ান্তর খোঁজে পাচ্ছেনা সীমান্ত শহরের ভাল মানুষগুলো। অনেকেই ইতোমধ্যে পুলিশের কারনে ফতোর হয়ে গেছে অহরহ। সেক্ষেত্রে প্রকৃত ভাল মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে দিনরাত। তারা সম্মান ও লজ্জাবোধের কারণে স্ত্রীর স্বর্নালংকার বিক্রি-জমিজমা বন্দক ও দেনা-হলাত নিয়ে দালাল ও পুলিশের দাবীকৃত টাকা শোধ করে বাড়িতে কোনরকম ফিরে আসে। ভয়ে কোন মানুষ এখন মুখ খুলতে পারছেনা। চলছে একপ্রকার নিরব আইয়ামে জাহেলিয়াতের শাসন ব্যবস্থা।
এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে অনেকেই সদিচ্ছা না থাকা সত্তেও চলে যাচ্ছে তাবলীগ জামাত ও এলাকাছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ইয়াবার চালান জব্দ ও কেউ আটক হলে তদস্থলে পলাতক আসামী দেয়ার হুমকি দিয়ে মোটাংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেনীর চালাল চক্র ও পুলিশ। পরে কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও কোন পুরুষকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ গ্রামবাসীদের হয়রানী করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে একাধিক।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, পুলিশের হয়রানী ও গণগ্রেপ্তারের ভয়ে হ্নীলা ও টেকনাফের অধিকাংশ গ্রামের পুরুষরা বাড়ি ছেড়েছে। এরকম হয়রানি ও টাকা দিয়ে ছাড় পেয়েছেন হ্নীলার ব্যবসায়ী নির্মল ধরের কর্মচারী আবছার উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে দেড় লক্ষ টাকায় ২ কিস্তি করে মোট ৩ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। আবছার পুলিশের মারধরে আজিবন পঙ্গু হয়ে গেছে।
হ্নীলার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী আবছার বস্ত্র বিতানের মালিক আবছার (সওদাগর) কে দোকানে যাওয়ার সময় টেকনাফ থানার এসআই আলিম উল্লাহ ন্যাচারপার্কে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ইয়াবা দিয়ে চালান দিয়ে হুমকির মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। হ্নীলা ষ্টেশনের শফি বস্ত্র বিতানের মালিক শফিউল আলম প্রকাশ শফি মাঝিকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৩ লক্ষ টাকা আদায় করে রাতের আধারে ছেড়ে দেয়। মিন্টু নামক এক দোকান কর্মচারী তাবলীগ জামাত থেকে আসার পরপরই বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে আড়াই লক্ষ টাকায় ম্যানেজ হয়ে মুচলেকায় ছেড়ে দেন। হ্নীলা মোরাপাড়া এলাকার স্কুল ছাত্র জাহাঙ্গীর এর বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে যাই। পরে অনেক তালবাহনা ও ইয়াবার চালান দিয়ে ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্ত হয় স্কুল ছাত্র জাহাঙ্গীর। এরকম গত ২৯ মার্চ হ্নীলা উত্তর আলীখালীর মোহাম্মদ হোছাইনের ছেলে দুবাই প্রবাসী ফারুককে অনর্থক ধরে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। একই এলাকার মিজান নামের এক আসামীকে খুঁজতে গিয়ে নামের সাথে মিল থাকায় অন্য এক মিজানকে নিয়ে যায়। হ্নীলার আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী পুতিয়া মিস্ত্রি তার মা-বাবা ও ভাই-বোন মোট ৫ জনকে আটক করেন টেকনাফ থানার এসআই আলীম ও এসআই মালেক। তারা দিনদুপুরে কালোগ্লাসের একটি নোহা নিয়ে তুলে নিয়ে অজানা স্থানে। পরে দফায় দফায় দেন-দরবারের মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ টাকায় সবাই মুক্তি পান। হ্নীলার আরেক রশিদ মিস্ত্রি নামে এক অসহায় ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে টাকা দিতে না পারায় মামলা না থাকা সত্তেও ইয়াবার মামলায় চালান দিয়ে দেয়। রংগীখালী জুম্মাপাড়া এলাকার কলেজ ছাত্র আবদুর রহমানকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে মুচলেখায় ছেড়ে দেয়। এভাবেই কত অহরহ মানুষকে হয়রানী করছে তা প্রত্যক্ষদর্র্শী ও টেকনাফের সমস্ত মানুষ এর মাঝে নানা কৌতুলের সৃৃষ্টি হয়েছে। হ্নীলা ও টেকনাফের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের এসব হীনমন্য ও জগন্য কাজের ইন্ধন দাতা স্থানীয় কতিপয় চুনুপটি পকেট নেতা আর গ্রাম পুলিশ তারা প্রতি ১শত টাকায় ২০% কমিশন ১ শত ১ লক্ষ টাকা হারে দালাল- পুলিশ মিলে ভাগবাটোয়ারা করে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে হ্নীলা এক ব্যবসায়ী জানান, যারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে তারা প্রায় সবায় বিরুধী মতাদর্শের সাথে জড়িত সরকার দলীয় হলে শুধু মাত্র রক্ষা, হোক সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী আদম পাচারকারী অথবা ইয়াবা ও আদমপাচারের একাধিক মামলা ও অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি।
প্রতিনিয়ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় বাপের বদলে চাচা, ভাইয়ের বদলে ভাই, স্বামীর বদলে স্ত্রী-কন্যা, মা, বদলে বোন গ্রেপ্তার নাটক থেকে পুলিশ ধরলেই টাকা, টাকার অংক না বাড়লে মারের এমাউন্ট কমেনা, গেল এক মাসে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন থেকেই অপরাধী নিরপরাধী আটক করা হয়েছে প্রায় এক শত জনের বেশী, কিন্তু মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরন করেনি ১০ জনও।
আর করবেই বা কিভাবে, আটক কৃতদের কাছ থেকে তো অনেক সময় কিছুই পায়না তার পর পুলিশই নিজেদের কাছ থেকে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক দিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেয়।
আসামী আটকে পুলিশ মানে নিজেদের আইন, থাকেনা কোন ওয়ারেণ্ট, থাকেনা কোন গ্রাম পুলিশ বা স্থানীয় চৌকিদার/দফাদার। কথিত আসামী না পেলে নিয়ে আসে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল।
এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হ্নীলার ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার নিরপরাধী মানুষকে হয়রানি না করতে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবি বলেন, টেকনাফে অহরহ এজাহার ভুক্ত আসামী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী আছে এবং এজাহার কারী সুনিদিষ্ট মামলায় কে কিভাবে আছে এটা স্পর্ষ্ট করা আছে। তবুও পুলিশ শুধু মাত্র হয়রানী করার জন্য বারবার গ্রামে হানা দিচ্ছে। আইনে এধরণের কোন ব্যাখ্যা নেই। তিনি পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, এটা মানবাধিকার লংঘন। স্বাধীন দেশে এটা কাম্য নয়।
এব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, এরকম অভিযোগ শুনেছি তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।