ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৯/০৩/২০২৩ ১০:২৭ এএম

রমজানের শুরু থেকে জনশূন্য হয়ে আছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো। বিশেষ করে, সেন্টমার্টিন, ইনানী, হিমছড়ি, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর রাবার বাগান,বৌদ্ধ মন্দির ও টেকনাফের মাথিনের কূপসহ সকল পর্যটন কেন্দ্রে একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়েছে। তাই পর্যটন জোন কলাতলীর সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোর বুকিংও শূন্য। একই সঙ্গে পর্যটন জোনের সব ধরনের খাবার হোটেলেও ক্রেতা না থাকায় বেশির ভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে।

শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্ট নয়, রমজানের কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোও বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকার ঝিনুক, আচার, মাছ ফ্রাই, ডাব, চটপটি এবং কাপড়ের দোকানগুলো ৯০ শতাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।

সৈকতের ঝিনুক ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন বলেন, রমজানের এক মাস আমাদের কোনো ব্যবসা হবে না। তাই খুব কষ্টে দিন যাবে। সামনে ঈদ এই নিয়েও পরিবারে আরেকটি বড় অংকের খরচ আছে। সব মিলিয়ে এই একমাস টানাপোড়েনে চলবে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

সৈকতে ডাব ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, প্রতি বছর রমজানে এক মাস বিচে কোনো ব্যবসা বাণিজ্য হয় না। এনিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতে হয় ব্যবসায়ীদের। সৈকতে পর্যটক নেই। সেই জন্যে বিকিকিনিও নেই। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়।

ইজিবাইক (টমটম চালক) শফিক আহমেদ জানান, রোডে গাড়ি নামালে ক্ষতি ছাড়া লাভ হয় না। সারাদিন গাড়ি টেনে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিলগুলো তুলতে কষ্ট হয়ে যায়। পর্যটক না থাকায় আমাদের ভাড়া কমে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, কক্সবাজারে এখন কোনো পর্যটক নেই বললেই চলে। রমজান তাই কক্সবাজারে কোনো পর্যটক আসছেন না। তবে ঈদের ছুটিতে অন্তত ১৫ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। গেল বছর রমজানের ঈদের ছুটিতে ১০ দিনে ১২ লাখ পযটকের সমাগম ঘটেছিল।

কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল মালিকেরা বলছেন, প্রতিবছর রোজার একমাস শহরের অনেক হোটেল-রোস্তারাঁ অঘোষিতভাবে বন্ধ থাকে। এ সময় কর্মচারীদের এক মাসের বেতন-বোনাস দিয়ে অনেকটা ছুটিতে পাঠানো হয়। কেউ কেউ হোটেল-রেস্তোরাঁতে সংস্কার ও রঙের কাজ চালান। রোজার শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের সময় হোটেল- রেস্তোরাঁগুলো পুনরায় খোলা হয়। তবে করোনা মহামারির দুই বছর হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকেরা ব্যবসা করতে পারেননি। এরপর ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেকে ব্যবসা দাঁড় করালেও এখনো লাভের মুখ দেখেননি। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এবং চলতি সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত হোটেল -রেস্তোরাঁগুলো ব্যবসা ভালো হলেও রোজার মাসের মন্দার ধকল সামলাতে অনেকের হিমশিম খেতে হবে। বিশেষ করে যাদের ব্যবসা ছোট তাদের টানাপোড়েনে চলবে।

কক্সবাজার শহরের কলাতলী ওয়ার্ড বিচের ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী তৌহিদুর ইসলাম বলেন, রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার একদম পর্যটক নেই। গত এক সপ্তাহে একটি কক্ষও ভাড়া দিতে পারিনি। তবে এই সময়ে রুমগুলোর মেরামতের সিন্ধান্ত নিয়েছি। কারণ ঈদের দিন থেকে পর্যটক আসতে শুরু করবে। এই এক মাসের ক্ষতি ঈদের ছুটিতে পুষিয়ে নিতে হবে।

একই কথা জানান শালিক রেস্তোরাঁর মালিক নাছির উদ্দীন বাচ্ছু। তিনি জানান, এই মূহূর্তে কক্সবাজারে একদম পর্যটক নেই। অন্যান্য বছর কিছুটা পর্যটক থাকলেও এবারে একদম নেই। ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

হোটেল আইল্যান্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল কবির পাশা বলেন, পুরো রমজান মাস পর্যটক আসবে না। ফলে বুকিং শূন্য থাকবে সব কক্ষ। এখন হোটেলকে নতুন রূপে তৈরির উপযুক্ত সময়। তাই হোটেলের কক্ষগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে শুরু করে বাহ্যিক স্থানগুলোকেও নতুন করে সাজানো হচ্ছে।

হোটেল-মোটেল কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, হোটেল কর্মচারী অধিকাংশের বোনাস দেওয়া হচ্ছে না। তবে এবার হোটেলের স্টাফ ছাঁটাই হয়েছে আগের তুলনায় কম।

কলিম উল্লাহ জানান, প্রতি বছরই রমজান এলে কক্সবাজারে পর্যটকে ভাটা পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারে পর্যটক না আসলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কারণ তারা লোন নিয়ে ব্যবসায় নামেন, এতে তাদের পুঁজি হয় স্বল্প, ব্যবসায় লাভও হয় অল্প। বড় বড় ব্যবসায়ীদের অর্থ জমা থাকলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টাকা জমানোর কোনো সুযোগ থাকে না। মৌসুমে কয়েক মাস ভালো ব্যবসা হলেও রমজান মাস ও বর্ষাকালে একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে যায়। তাই সারাবছরই অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভাব অনটন লেগেই থাকে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটন মৌসুম শেষ, সেই জন্যে এখন পর্যটকশূন্য কক্সবাজার। তবে ঈদের পরে আবারও পর্যটকে ভরপুর হয়ে যাবে কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা শিবিরে ইফতার যে রকম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা ...

লাইসেন্সের কোন কাজ নেই, টাকা দিলে লাইসেন্স লাগে না!- উখিয়ার ব্যবসায়ী সাদ্দাম

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই কথিত লেভেল লাগিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারির পানি বিক্রি করেন উখিয়ার সাদ্দাম মটরসের স্বত্তাধিকারী ...