প্রকাশিত: ১২/০৮/২০২২ ৮:০৫ এএম

জাগো নিউজ::

দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সদ্য এমবিবিএস পাস করা জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীক (২৭) ও রেজাউল করিম রেজার। প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে তারা দুজনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছেন এবং বিভিন্ন হোটেলেও থেকেছেন। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানতো মেয়ের পরিবার। এক পর্যায়ে প্রেমিক রেজা বিয়ের প্রস্তাব দেন মেয়ের পরিবারকে। কিন্তু রেজার চরিত্রগত সমস্যার কারণে মেয়ের পরিবার সে প্রস্তাবে রাজি ছিল না।

নিয়মিত মেলামেশার ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওঠেন তারা। বিয়েতে মেয়ের পরিবারের অসম্মতিতে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে হোটেল কক্ষেই প্রেমিকা জান্নাতুলকে ছুরিকাঘাত ও নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেন পাষণ্ড প্রেমিক রেজা।

নিহতের পারিবারিক সূত্র, একাধিক গোয়েন্দা সূত্র ও জাগো নিউজের অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

নিহতের পরিবারের দাবি, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় জান্নাতুলকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে রেজা। পরিবারের অমতে বিয়ের পিঁড়িতে না বসাই কাল হলো মেয়েটির। এ ঘটনায় তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবি জানিয়েছে। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত রেজাউলকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘাতক প্রেমিক রেজাউল করিম রেজা বেকার হওয়ায় বিয়ে দিতে রাজি ছিল না জান্নাতুলের পরিবার। এ নিয়ে প্রেমের সম্পর্কে কলহ চলছিল। কিন্তু তারা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় চাইলেই পরিবারের অমতে বিয়ে করতে পারতেন। তাহলে কি এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মোটা অঙ্কের টাকার দেনা-পাওনা, প্রেমিকের অন্য কোনো সম্পর্ক জেনে যাওয়া, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া কিংবা তৃতীয়পক্ষের কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা নিহিত রয়েছে? যদিও আপাতত এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

নিহত জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকির বাবা শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামে। রাজধানীর রাজারবাগে ২ নম্বর মোমেনবাগ দোলনচাঁপা ভবনে থাকেন তারা। মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করেন জান্নাতুল। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গাইনি বিষয়ে একটি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন।

বুধবার সকাল আটটার দিকে জান্নাতুল বাসা থেকে বের হন ক্লাসের কথা বলেন। রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরবেন বলে জানান। তবে বাসায় না ফেরায় রাত ১১টার দিকে তার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন পরিবারের সদস্যরা।

অভিযুক্ত রেজাউল করিম রেজার পরিচয় সম্বন্ধে জান্নাতুলের বাবা বলেন, একদিন তার সঙ্গে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন রেজা। ব্যাংকে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে চাকরি হারিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানা নেই। মামলার কপিতেও রেজার পরিচয় ও ঠিকানা অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শফিকুল আলম বলেন, আমার তিন মেয়ে। জান্নাতুল ছিল দ্বিতীয়। অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েটিকে নিয়ে। তার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হবে। সে অনুযায়ী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই এবং সম্প্রতি সে এমবিবিএস পাস করে। আমার কয়েক লাখ টাকা খরচও হয়েছে। তবে আমার মেয়ে এভাবে চলে যাবে আমি এখনো কল্পনা করতে পারছি না।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সদ্য এমবিবিএস পাস করা নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিহতের বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা করেন। অভিযুক্ত ও নিহতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তা মেয়েটির পরিবার আগেই জানতো। এর আগে অনেকবার তারা দুজন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে, দেখা করেছে। এর আগে ছেলেটি মেয়েটির পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তবে ছেলের চরিত্রগত কারণে মেয়ের পরিবার বিয়েতে রাজি হয়নি। এরপর ছেলেটি বিভিন্ন সময় হোটেলে মেয়েটিকে নিয়ে ডেট করতো।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি মেয়েটিকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলেন রেজাউল করিম রেজা নামের এক যুবক। মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তিনি বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় রেজাকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, নিহত জন্নাতুলের সঙ্গে অভিযুক্ত রেজার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তবে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কটি মেয়েটির বাবা মেনে নেয়নি বলে আমাদের ধারণা।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত রেজা একসময় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর কোনো কারণে তিনি চাকরিচ্যুত হন। পরিবার প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়া অথবা অন্য কোনো কারণে এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে কি না, তা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, জান্নাতুল খুনের পেছনে প্রেমের কলহ থাকতে পারে। বিশেষ করে, নিহত জান্নাতুলের পরিবার তার প্রেমিক রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হতো। হয়তো এ কলহের জেরেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবাসিক হোটেলে নিয়ে জান্নাতুলকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, এর আগেও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা ওই আবাসিক হোটেলে বেশ কয়েকবার উঠেছিলেন।

এদিকে জান্নাতুলের সুরতহাল প্রতিবেদনে কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নার্গিস আক্তার উল্লেখ করেন, তার থুতনি, ঠোঁট ও গলায় সাড়ে আট ইঞ্চি, বাম কাঁধে দেড় ইঞ্চি, দুই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে, বুকের মাঝখানে, পেটে ছয়টা কাটা জখম রয়েছে। এছাড়া পিঠে একটি, বাম পায়ের হাঁটুর ওপর ও হাঁটুর নিচে কাটা জখম রয়েছে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা কিংবা ধর্ষণ হয়েছেন কি না, তা-ও ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে, বুধবার (১০ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে খবর পেয়ে রাজধানীর পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেল থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করা নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকের (২৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার পর পুলিশ জানায়, ওই আবাসিক হোটেলটিতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে উঠেছিলেন জান্নাতুল। এরপর সুযোগ বুঝে স্বামী পরিচয়ধারী কথিত বয়ফ্রেন্ড রেজাউল জান্নাতুলকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বুধবার দিনগত রাতে জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা দুজন (জান্নাতুল ও রেজাউল) উঠেছিলেন। এরপর রাতে পুলিশকে খবর দিলে হোটেলটির চতুর্থ তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষের বিছানার উপর থেকে ছুরিকাঘাত ও গলাকাটা অবস্থায় জান্নাতুল নাঈমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের শরীরে একাধিক দাগ রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দিনগত রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঘটনায় মূলহোতা রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। রাতেই বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ঘটনার পর ছায়াতদন্ত শুরু করে র‌্যাব। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামে অভিযান প্রেমিক রেজাকে গ্রেফতার করা হয়

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...