ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৯/০৮/২০২২ ৮:২৮ পিএম

পটিয়ার প্রাচীন সিনেমা হলটি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। এই সিনেমা হল বন্ধের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আর কোনো সিনেমা হল থাকল না। এক সময় উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজ্জাক-শাবানা-কবরীদের মন মাতানো সেই সিনেমা আজ আর নেই।

পটিয়ার তিনটি সিনেমা হলের মধ্যে মুক্তি বন্ধ হয়ে যায় ২০১০ সালে আর সবুজ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায় করোনাকালীন ২০২১ সালে। বাকি ছিল শুধু ছন্দা সিনেমা হল। এটি এতদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও অব্যাহত লোকসানের মুখে মালিক অজিত রায় হলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য, পটিয়া ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীতে দুইটি সিনেমা হল ছিল। তার একটি রাঙ্গাবন ২০১৮ সালে এবং অভিসার ২০১৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বিজিবি সদর দপ্তরে একটি সিনেমা হল ছিল। এখানে বিজিবি সদস্য ছাড়াও আশপাশের মানুষ এমনকি বান্দরবন থেকে লোকজন এসে সিনেমা দেখতেন। দর্শকশূন্যতায় সেটিও ২০১০ সালের দিকে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বান্দরবনের আজিজ নগরে একটি, কক্সবাজার জেলা সদরে দুইটি এবং টেকনাফ বিজিবি সেক্টরে বিজিবি অডিটরিয়াম নামে একটি সিনেমা ছিল আগেই বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ফটিকছড়িতে ঝংকার নামে একটি হল ছিল সেটিও অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে।

পটিয়া ছন্দা হলের ম্যানেজার মো. ফারুক জানিয়েছেন, তাদের ছন্দা হলটি ৬৫০ আসনের ছিল। দর্শক টানতে তারা ডিজিটাল স্ক্রিন ও সাউন্ড সিস্টেম চালু করেছিলেন। তবুও দর্শকদের হলমুখী করা যায়নি। আশির দশকে এই হলে রাজ্জাক-শাবানা, জসীম-ববিতাদের ছবি দেখতে হাউজফুল হয়ে যেত দর্শকে। কাস্টম, ভ্যাট-ট্যাক্স, বিদু্যত্ বিল, জেনারেটর খরচ, কর্মচারীদের বেতন, হলের ভাড়া সব দিয়ে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। তবুও আদি পেশা হিসেবে এটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল মালিক পক্ষ। কিন্তু ভালো ছবির অভাবের সঙ্গে, ডিজিটাল প্ল্যাটফরম, স্যাটেলাইট চ্যানেল, নানা অ্যাপস, ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে মানুষ এখন ঘরে বসেই বিনোদন পাচ্ছে। কেউ আর হলমুখী হচ্ছে না। তাছাড়া পরিবার পরিজন নিয়ে দেখবে এমন সিনেমা এখন আর তৈরিও হয় না।

সম্প্রতি ঢাকাই ছবি পরান ও হাওয়া ছবি কিছুটা সাড়া ফেললেও সারা দেশে তার কোনো প্রভাব নেই। পটিয়ার ছন্দা হল হাওয়া ছবিটি প্রদর্শনের মাধ্যমেই তাদের হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। হলের মালিক অজিত রায় জানিয়েছেন, এ ধরনের ছবির ধারাবাহিকতা থাকবে না। ঘুরে ফিরে একই কাহিনী, একই সংলাপ দর্শককে আকৃষ্ট করে না।

পটিয়া উপজেলা তথ্য অফিসার দীপক চন্দ্র দাশ বলেছেন, সিনেমা হলে একসময় জাতীয় দিবসে বিনা টিকিটে দর্শককে দেশাত্মবোধক ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্হা ছিল। অনেক রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামও হতো সিনেমা হলে। এখন সরকারি-বেসরকারি অডিটোরিয়াম হয়েছে। স্বভাবতই সব দিক দিয়েই সিনেমা হলের চাহিদা কমেছে। তাছাড়া মানুষ চায় এখন অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ। বিশাল স্হাপনা জুড়ে সিনেমা হলের পরিবর্তে যদি সেখানে মার্কেট করা যায় তাতে অধিক লাভবান হওয়া যায়। সেই মনোভাব থেকেও অনেকে সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে পারেন। সুত্র:দৈনিক ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত