প্রকাশিত: ১৭/০৬/২০১৬ ১১:০২ এএম , আপডেট: ১৭/০৬/২০১৬ ১১:০৩ এএম
প্রতীকী ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেকার মানুষকে টার্গেট করে নীরবে মানবপাচার চলছে। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অচেনা দেশে কাজের নামে ভ্রমণ ভিসায় মানুষ পাচার করা হচ্ছে। কখনও কখনও দালালসহ ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জাল পাসপোর্ট। কিন্তু তাতে থেমে নেই আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র‌্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মানব পাচারসূত্র জানায়, কাজের কথা বলে নারীদের দেশের বাইরে পাঠানো হলেও তাদের কোনও কাজ দেওয়া হয়নি। দিনের পর দিন তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। বিদেশে জিম্মি করে দেশে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। তবে কতো সংখ্যক মানুষ পাচার হয়েছে তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সূত্র মতে, মানবপাচারের ক্ষেত্রে এখন কৌশল বদলাচ্ছে পাচারকারীরা। তারা একজন একজন করে টার্গেট করে দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার থেকে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে প্রতিবছর সংগ্রহ করা হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এমনকি অপহৃত ব্যক্তিদের জিম্মি করে পরিবার থেকে অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে।

এ বছরের মার্চে রাজধানীর পল্টন থেকে উগান্ডায় মানবপাচারের অভিযোগে জাঙ্গাগীর আলম মিন্টু (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাব। তিনি অর্ধশত মানুষকে ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে উগান্ডায় পাঠিয়েছিলেন।পরে উগান্ডার পুলিশ তাদের আটক করে। আটক করার পর তাদের জেল হয়। জেল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার পর র‌্যাব সদর দফতরে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগের তদন্ত করে জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‌্যাব।

এর আগে ফেব্র“য়ারিতে রাজধানীসহ যশোর ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের ৮ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। এসময় উদ্ধার করা হয় ৪ নারীকে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২টি পাসপোর্ট, ১১টি ভিসা, ৫১টি বিমানের জাল টিকিট এবং ৫৩টি বিদেশে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া, যশোরের বেনাপোল থেকে সোহাগী ও শিরিনকে এবং দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানা এলাকা থেকে শারমীন ও রিয়াকে মানবপাচারকারী চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, এই চক্রটি নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিরীহ ও গরীব নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এনে পাচার করে দেয় তারা। পরে তাদের দিয়ে জোর করে যৌনকর্ম করানো হয়। অনেক সময় কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের কাছেও বিক্রি করে দেওয়া হয় নারীদের। ইতোপূর্বে এই চক্রটি অন্তত চার শতাধিক কিশোরী-নারীকে বিদেশে পাচার করেছে।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়,পাচারের জন্য সাধারণত নিম্নমধ্য বিত্তদের টার্গেট করে পাচারকারীরা। এমনকি যারা বেকার কিন্তু কিছু টাকা-পয়সা যোগাড় করতে পারবে তাদেরও টার্গেট করা হয়।

গত জুনে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ‘শাপলা ভবনে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের ৮৫০টি জাল পাসপোর্ট ও শিপিং লাইনের ৪০টি ডিসচার্জ জাল সনদসহ চার সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় চার ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়।

চক্রটির কাছ থেকে ইরাক, দুবাই, লিবিয়া, মোজাম্বিক, মিশর, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, ইথিওপিয়া, মালয়েশিয়া, নাইরোবিসহ বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, এয়ার টিকিট, সাগরপথে বিদেশে মানব পাচারের শিপিং লাইনের ডিসচার্জ জাল সনদ, বিভিন্ন বিমানবন্দরের এরাইভাল, ইমিগ্রেশন জাল সিল,বিভিন্ন দূতাবাসের জাল সিল ও প্যাড উদ্ধার করা হয়।

মানবপাচার চক্রগুলো থেমে নেই। বাংলাদেশের দালালদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীদের সঙ্গে ভালো যোগসূত্র হয়েছে বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারের শীর্ষ মাফিয়াগোষ্ঠী বাইরে বসে এসব নিয়ন্ত্রণ করে। তারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে বিভিন্ন জনকে দালাল নিয়োগ করে। তাই গ্রেফতারের পরও নতুন নতুন দালাল বা পাচারকারীর সৃষ্টি হচ্ছে।

মানবপাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতার কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী মঞ্জুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মূলত বেকার সমস্যা থেকেই মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চায়। বৈধ ও অবৈধ পথে মিলিয়ে মানুষ পাচার হচ্ছে। এবিষয়ে আরও জনসচেতনতা তৈরি করা দরকার।’ বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...