
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা ইস্যু। কোন গোষ্ঠী যেন নির্বাচনের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলতে না পারে সে লক্ষ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ক্যম্পগুলো থেকে নানাভাবে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অপরাধ কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও আছে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা বিশৃঙ্খলা ঘটানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। সঙ্গে আছে রোহিঙ্গাদের ভাড়া করে এনে ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করানোর প্রবণতার শঙ্কা।
তবে অতীতের কোনো সংসদ নির্বাচনের সময় এবারের এত সংখ্যক রোহিঙ্গা ছিল না দেশে। তাই এবারের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা প্রশাসনের জন্য (বিশেষ করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম) নতুন বাড়তি একটি কাজ বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন বলেছেন, ‘কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে। তা সম্পূর্ণ সিলগালা করে দিতে হবে। কোনো রোহিঙ্গা বের হতে পারবে না। কারণ তাদের ভাড়া করে নিয়ে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।’ ইসি সচিবের এ বক্তব্যের পর বিষয়টি সামনে আসে।
নির্বাচন সামনে রেখে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলোতে টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনে ব্যবহার করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শুধু চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো কারণে আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বের হওয়া নিয়েও কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
র্যাব-৭ টেকনাফ ক্যাম্প ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কেউ যেন ফায়দা নিতে না পারে সেজন্য ক্যাম্পে র্যাবের দুটি টিম কাজ করছে। নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই সমস্যা হয়ে না দাঁড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় ক্যাম্প থেকে কোনো রোহিঙ্গাকে বের হতে দেওয়া হবে না।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন,নির্বাচনে যাতে রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রিত থাকে সেজন্য প্রশাসনের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে-পরে কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে প্রশাসন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘নির্বাচনে পুলিশ মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পাশপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পও দায়িত্বরত থাকবে পুলিশের একটি অংশ। তবে এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যাতে বের হয়ে কক্সবাজার বা আশপাশের কোথাও বেরিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বলেন, নির্বাচনে রোহিঙ্গার বিষয় নিয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন আছি। নির্দিষ্ট চেকপোস্ট ছাড়াও বিজিবি, র্যাব এবং জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুত। আশা করছি তাদের কারণে কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
পাঠকের মতামত