বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানার খোঁজে চলছে যৌথ অভিযান। গত ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের আটকের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, গহিন পাহাড়ে তারা পালিয়ে আছে। অভিযানে র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ফোর্সদের কাছে খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দিচ্ছে। জঙ্গিদের ধরতে হেলিকপ্টার থেকে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। এলাকার লোকজনকে আতঙ্কিত না হতে মাইকিং করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন শিবলী জানান, রুমা ও রোয়াংছড়িতে অভিযানের বিষয়গুলো যৌথ বাহিনী দেখছে। চলমান অভিযান সম্পর্কে প্রশাসনকে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বড়থলী ইউনিয়নের বিলপাড়ার রাইত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মাথার ওপর প্রতিদিন হেলিকপ্টার ঘুরছে। বিলাইছড়ি ফারুয়া ইউনিয়নে আত্মীয়ের ঘরে আশ্রয় আছি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা না যাবে, ততক্ষণ অভিযান চলবে। গহিন বনে তাদের আস্তানা রয়েছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পাহাড়ে দুটি আস্তানার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। আরও গোপন আস্তানা রয়েছে কিনা, চলছে সেই খোঁজ।

দেশে গড়ে ওঠা একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) যোগসূত্র পাওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে। নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ধরতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব এই অপারেশন চালাচ্ছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এবং রুমা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সম্প্রতি র‌্যাব জানিয়েছিল, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকস্ফীয়া নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠেছে। আর ঘরছাড়া তরুণদের অনেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় সেখানে তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। গোপনে তারা উগ্রপন্থি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযানের অংশ হিসেবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং ও প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। জঙ্গিদের অবস্থান করার তথ্য দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রচারপত্রে। এ ছাড়া উগ্রপন্থিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। পুরস্কার ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জঙ্গিদের ব্যাপারে খোঁজ দেয়নি।

দেশে সক্রিয় হরকাতুল জিহাদ, আনসার আল ইসলাম, জেএমবিকে একত্র করার চেষ্টায় একটি গ্রুপ। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পাহাড়ি এলাকায় কুকি-চিনদের ক্যাম্পে হিজরতকারীদের ১২ জনকে পাঠানো হয়েছিল। এর পর ওই বছরের নভেম্বরে ২০ জনের একটি গ্রুপ সেখানে যায়। এ ছাড়া ডিসেম্বরে গিয়েছিল ১৭ জনের আরেকটি দল। চলতি বছরের আগস্টে একটি গ্রুপ সেখানে পৌঁছে। এ চক্রের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন শামিন মাহফুজ। সুত্র: সমকাল