প্রকাশিত: ২০/০৩/২০১৭ ১:৪১ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের নিজ ভাষায় শুদ্ধ করে কথা বলেন না। এমনকি নিজেদের লিপির পরিচয়, ব্যবহার সম্পর্কেও জানেন হাতে গোনা কয়েকজন। শুধু ভাষা নয়, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পোশাক, খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এনেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত অংশ।

শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে সেই স্মৃতি ভুলতে রোহিঙ্গারা নিজ ভাষার ব্যবহার ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে।

তবে ভাষা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাষা, পোশাক,জীবনযাপন বদলে যাওয়াটা রোহিঙ্গাদের ‘আত্মরক্ষার কৌশল’। রোহিঙ্গারা এখন বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পাবর্ত্য তিন জেলার প্রধান ভাষা ‘চাটগাঁইয়া’ বাংলায় কথা বলে। তবে তাদের ভাষায় আরবী, উর্দু, ফার্সি ও বার্মিজ ভাষার প্রভাব রয়েছে। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ ভাষার কারণে রোহিঙ্গাদের সহজে চিনতে পারলে, অন্য অঞ্চলের মানুষ চিনতে পারে না।

রোহিঙ্গা রিফিউজি ইয়ুথ সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস আরমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বে মানুষের আগ্রহ থাকলেও নিজেদের ভাষার প্রতি মনোযোগ নেই তাদের।চাটগাঁইয়া ভাষা রোহিঙ্গারা এমনভাবে রপ্ত করছে যে, নিজেদের ভাষায় ভুলতে বসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পড়ালেখায় রোহিঙ্গা ভাষার লিপির ব্যবহার না করায় তা আমরা ভুলতে বসেছি, এটা সত্য। তবে এটাও সত্য, শুধু নিরাপত্তাহীনতার কারণে রোহিঙ্গারা রাতারাতি নিজেদের পোশাক-খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করছে।’

জাফর আলম দীপু নামের এক রোহিঙ্গা ফার্মেসির মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা নারীরা সধারণত থামি-ব্লাউজ ও পুরুষরা লুঙ্গি পরে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এগুলো ব্যবহার করছি না। এখানে এখন নারীদের পছন্দ ত্রিপিস।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুরা নিজের ভাষায় লিখতে পড়তে পারে না। এদেশের স্কুলে রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলা শিখছে। ফলে তারা নিজের ভাষা ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, কারণ এক সময় আমরা নিজের দেশে চলে যাবো। তাই নিজের ভাষা ভুলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

বর্তমান মিয়ানমারের রোহিং এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাষা বিজ্ঞানী হাকিম আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ভাষা চট্টগ্রামের ভাষার অপভ্রংশ। ভাষা বিজ্ঞানে জরুরি একটি বিষয় হলো, ভাষার পরিবর্তন, যা প্রতিনিয়ত হয়। ধরা যাক, ব্যক্তি তার ভাষা নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না, তার পোশাক আচার-আচরণ সমাজে তাকে অস্বস্তিতে ফেলছে, তখন সে জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটায় এমন যেকোনও কিছুকেই বদলে ফেলতে চান।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে মানুষের ভাষা পরিবর্তন ইচ্ছেকৃত আর রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে অনিরাপদবোধ থেকে। তাদের মনে এর প্রভাব আছে। এটি আত্মরক্ষার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু এই আত্মরক্ষার কৌশল নিতে গিয়ে কয়েক প্রজন্ম পর তারা তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলবে।’ সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে রাতভর আতঙ্ক

মিয়ানমার থেকে আসা গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ...

ফিটনেস-অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়া সেন্টমার্টিনে যাবে না জাহাজ

কক্সবাজারে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘আটলান্টিক ক্রুজে’ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ...

অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন সেন্টমার্টিনগামী ১৯৪ পর্যটক

কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ‘দি আটলান্টিক ক্রুজ’ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে, ...

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে আগুন

কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে সেন্টমার্টিনগামী একটি যাত্রীবাহী জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ...

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১০ টার দিকে ...