ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৯/০৫/২০২৩ ৯:০৬ এএম

দেশে নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রণয়নের দাবিতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন রাকিব হাসান (২৪) নামের এক যুবক। তিনি কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুরের ষাইটমারা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।

গত ২০ এপ্রিল ‘দূরত্ব ও সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত কর’ শিরোনামে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্দা জিরোপয়েন্ট থেকে তিনি এ যাত্রা শুরু করেন। শেষ করবেন টেকনাফ জিরো পয়েন্ট গিয়ে। আগামী ১০ মে তিনি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পৌঁছবেন। ১১ মে ভোর ৬ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে যাত্রা করবেন।১২ মে অর্থাৎ ২৪ তম দিনে তিনি টেকনাফ গিয়ে যাত্রা বিরতি শেষ করবেন।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সীমান্তবর্তী আজিজ নগরে অবস্থান করছেন। পায়ে হেটে এখন পর্যন্ত তিনি ৮৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত হাঁটেন রাকিব। রাতে যেখানে হাঁটা বন্ধ হয়ে যেত, ওই এলাকায় পরিচিত কারও বাসায় বা কোনো হোটেল, মসজিদ, পেট্রোল পাম্প এর রেস্ট হাউজে রাতযাপন করেন।

দূরত্ব ভীতির কারণে কেউ সঙ্গী না হওয়ায় একাকী সে পদযাত্রা শুরু করে। রাকিব জানান, দেশে নদী দখল, নদীর উপর অন্যায়-অত্যাচার ও নদী বাঁচাতে আমার এই দীর্ঘ পদযাত্রা। এটা আমার প্রথম দীর্ঘ একাকী পদযাত্রা। দূরত্ব ও দিনের হিসেব করে আমি ২৪ দিনে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো। আমি একাই ১০০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রাকিব আরও জানান, আমি একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নই। বরং দেশের নদী দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত, নদী আমাদের দেশের রক্তনালীর মত। দেশে প্রবাহমান সমস্ত নদী এখন শুকিয়ে গেছে। আগামী এক দশকের মধ্যে অনেক নদী হয়তো মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে। যদি এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে দেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা আমাকে চরমভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। তাই সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েই পদযাত্রার পথ বেছে নিয়েছি আমি।

ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় সবার জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

পদযাত্রার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে রাকিব জানান, প্রথম কয়েকদিন হাটার পর পা ব্যথা ও ফুলে গেলেও এখন সুস্থ হয়ে গেছে। আমি মনোবলের উপর জোর দিয়ে এতটা পথ হেঁটে এসেছি। এতে করে আমি গন্তব্যের দিকে প্রায় এগিয়ে যাচ্ছি।

‘বাঁচতে হলে মহাশয়, রক্ষা করুন জলাশয়’, ‘বাঁচলে নদী, বাঁচবে দেশ, আলোর হবে পরিবেশ’, ‘দখল দূষণ বন্ধ করি, নদীর মতন জীবন গড়ি’ —এ স্লোগানকে সামনে রেখে নদী রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে সকলের প্রতি আহবান জানায় এই যুবক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে রাকিবের একক আন্দোলন ও প্রতিবাদ অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে বার্তা দিচ্ছেন এতে নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবেন।তার এই কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায় দেশবাসীকে সচেতন করেছে সে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে তাঁর এ পদযাত্রা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২৪ বছরের এ যুবক একজন শিক্ষার্থী। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...