রি-রোলিং মিল মালিকরা বলেছেন, আগামী জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিটন রডের দাম ৭ হাজার ৫০০ টাকা বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, তা না হলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল বুধবার আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটে স্টিল ও রি-রোলিং শিল্পখাতের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের নেতারা এ সব দাবি জানান।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স এসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। এ আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কথা বলা হলেও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা তা কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মাহবুবুর রশিদ জুয়েল বলেন, ‘আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে সরকার দেশে আধুনিক ভ্যাট পদ্ধতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজস্ব যেমন অপরিহার্য তেমনি দেশীয় শিল্প কারখানাও অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে (জুলাই থেকে) স্টিলের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট হারে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হলে প্রতি মেট্রিক টন রডের মূল্য ৭ হাজার ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে যেখানে প্রতি টন রডের মূসক ৯০০ টাকা।’
‘রডের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর আরোপের বিরূপ প্রভাবে স্টিল শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও আবাসন নির্মাণ ব্যাহত হবে।’ নির্মাণ শিল্পে রডের সঙ্গে আরও কয়েকশ’ প্রকার পণ্য ও সেবা জড়িত জানিয়ে মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘রডের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সব পণ্য ও সেবার উপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।’
দেশের অবকাঠামো নির্মাণের চলমান প্রকল্প বা চুক্তি ব্যয় বেড়ে যাবে, এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমে যাবে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন বিলম্বিত এবং বাধাগ্রস্ত হবে বলেও জানান মহাসচিব। রডের কাঁচামালের ৯৫ শতাংশ আমদানি নির্ভর জানিয়ে মাহবুবুর রশিদ ক্রয় পর্যায়ে রডের কাঁচামাল এমএস স্ক্যাপ ও স্পঞ্জ আয়রনের উপর বর্তমানের মতো কোন ভ্যাট না রাখার দাবি জানান। বিক্রয় পর্যায়ে রডের (এমএস রড, এমএস বিলেট এবং এমএস ইংগট) উপর ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মূসক নির্ধারণের প্রস্তাব দেন মহাসচিব।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের এখন বছরে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টন স্টিল উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বের ৫০তম বৃহত্তম কারখানার উৎপাদন ৭৫ লাখ টন। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনেক পথ রয়েছে। কিন্তু মূসক আরোপ করা হলে এটি বাধাগ্রস্ত হবে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর মহাসচিব হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, ‘আমরা দেব, তবে তা সহনশীলতার মধ্যে থাকতে হবে। নতুন ভ্যাট ব্যবস্থাপনার জন্য অবস্থাতো আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাট চূড়ান্তভাবে ক্রেতার উপরই পড়বে। এতে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। তাই আমরা বলব অন্তত নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত যাতে নতুন ভ্যাট চালু করা না হয়। আমাদের বাঁচতে দেওয়া হোক।’
রিহ্যাবের (রিয়েল স্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) প্রতিনিধি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আবাসন খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিক্রি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে নির্মাণ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। ক্রেতারা বাড়তি ব্যয় বহন করতে এখন মোটেই প্রস্তুত নয়। এখন এ ভ্যাট বাস্তবায়ন করা হলে এ সেক্টরটা নেমে যাবে।’
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি জানান, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুর রহমান বকুল, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।