[caption id="attachment_94155" align="alignleft" width="777"]
ফাইল ছবি[/caption]ত্রাণের পণ্য আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল রবিবার আরও ১২ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এর আগে ১২ এপ্রিল ৩ এবং ১৫ এপ্রিল ৯ ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে সাসপেন্ড করা হয়। গরিবের চাল আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রায় ৫৪ হাজার ৫শ মেম্বারের কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ত্রাণের পণ্য আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হওয়ার ঘোষণার পর গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আরও সক্রিয় হয়েছেন।
সূত্র জানায়, শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই নয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনিয়মই বরদাশত করা হবে না। কারণ ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের কারণে সরকারের গায়েই কলঙ্ক লাগছে। আর তাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।
advertisement
এদিকে গতকাল রবিবার ১২ জনকে সাসপেন্ড করে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাদের মধ্যে ৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৯ জন সদস্য। সাসপেন্ড চেয়ারম্যানরা হলেনÑ কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখদুম কবীর তন্ময়, নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর বড়মহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগ।
ইউপি সদস্যরা হলেন- নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বড়মহাটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রেজা, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন এবং ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রোকনুজ্জামান, ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুর রব পাটোয়ারী, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ মোশারেফ হোসেন এবং ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য রনি বেগম, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আল-আমিন চৌধুরী এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মোছা. আছিয়া খাতুন।
advertisement
গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ, ভিজিডির চাল আত্মসাৎ, খাদ্য সহায়তা চাইতে আসা লোকজনকে মারধর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দেশের সংকটময় মুহূর্তে এলাকায় অনুপস্থিত থাকা, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিত ইত্যাদি কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত ইউপি সদস্যরা হলেনÑ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবদুল মান্নান মোল্লা, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেকান্দার মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহেল মিয়া, ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ১নং বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মুহাম্মদ ওমর এবং একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জুয়েল মিয়া।
এ ছাড়া একই তারিখে সাময়িক বরখাস্ত চেয়ারম্যানরা হলেনÑ পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কোরবান আলী, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু, বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১নং আন্দারমানিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম।
গত ১১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন শাখার উপসচিব মো. এরশাদুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, করোনার কারণে শহর ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ কার্যক্রম, যেমন চাল, নগদ অর্থ, শিশুখাদ্য ও অন্য সামগ্রী বিতরণ করছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তৃণমূল পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এরূপ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়াদের সাময়িক বরখাস্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজুসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তারা করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ অথবা ভিজিডির চাল আত্মসাৎ অথবা জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জন্য প্রদত্ত খাদ্যশস্য বিতরণ না করে আত্মসাতের কারণে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন অথবা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অন্যায় করলে সব সময়ই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে মন্ত্রাণালয় আরও বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ত্রাণ বিতরণে অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিনে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি চলমান থাকবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
ইফতেখার আরও বলেন, ৫৯ হাজার চেয়ারম্যান-মেম্বারকেই স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনিয়ম প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে বর্তমানে অনিয়মের ঘটনা কম হচ্ছে। এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। সরকারি দল হোক কিংবা অন্য দলের হোক কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। গরিবের চাল-ডাল নিয়ে ছিনিমিনি বরদাশত করবে না সরকার। এ মহাসংকট থেকে উত্তরণে সবাইকে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। সুত্র : আমাদের সময়