বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪৯ শতাংশ ছেলে এবং ৩৩ শতাংশ মেয়ে শিশু এখনো শিক্ষার বাইরে আছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে বা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুদের মধ্যে ২১ শতাংশ গণিতে এবং বিজ্ঞানে মৌলিক দক্ষতার স্তরে পৌছায়নি। শিশুদের এই না শেখার ফলে, ২০৩০ সালে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৬৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আনুমানিক জিডিপির ১৭ শতাংশ। এই চিত্র মৌলিক দক্ষতা অর্জনে শুধু একজন শিশুর ভবিষ্যৎকেই অনিশ্চিত করে না, বরং এর প্রভাব পড়ে পুরো সমাজ ও অর্থনীতির উপর।
সম্প্রতি ইউনেস্কোর উদ্যোগে আয়োজিত 'দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন' রিপোর্ট ২০২৪'-এর পর্যালোচনাভিত্তিক এক কর্মশালায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। কক্সবাজারে স্থানীয় ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে (বিএলসি) অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)-এর সহযোগিতায় ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল 'দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন' রিপোর্ট ২০২৪'-এর সার্বিক ফলাফল প্রকাশ এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে শিক্ষাসংক্রান্ত বিনিয়োগ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরা।
‘দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন ২০২৪’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ইউনেস্কো, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD) এবং কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক শিশু শিক্ষার বাইরে থাকা এবং গণিত ও বিজ্ঞানে মৌলিক দক্ষতা অর্জন না করার কারণে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং সচেতনতার অভাবে অল্প বয়সে বিশেষত মেয়েদের গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির মতো সামাজিক ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।
প্রথমবারের মতো পরিচালিত বৈশ্বিক এ গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে ২৭২ মিলিয়ন শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে (১৩৯ মিলিয়ন ছেলে ও ১৩৩ মিলিয়ন মেয়ে), এবং ৫৭ শতাংশ শিশু এখনও মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। দক্ষতার এই ঘাটতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ইতোমধ্যেই বছরে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে প্রতিটি শিশু যদি স্কুলে গিয়ে শিখতে পারত, তাহলে ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক জিডিপি বছরে ৬.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৃদ্ধি পেত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নায়েমের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার বলেন, “ইউনেস্কো গবেষণা করেছে এবং আউটপুট দিয়েছে। এখন নায়েম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ আমাদের সবার দায়িত্ব হলো এই তথ্যগুলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে কাজ করি তবে দেশকে বদলে দিতে পারব।”
ইউনেস্কো ঢাকার এডুকেশন বিভাগের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মো. রমজান আলী কর্মশালায় ‘দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন রিপোর্ট ২০২৪’-এর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি প্রতিবেদনের মূল অনুসন্ধানগুলো তুলে ধরে সবাইকে শিক্ষা খাতে সময়োচিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জোনের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোঃ ফজলুল কাদের চৌধুরী; কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আমিরুল আনোয়ার চৌধুরী; কক্সবাজারের শিক্ষা খাতের সমন্বয়কারী কাজী মফিজুর রহমান, নায়েমের প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ শামসুন আক্তার সিদ্দিকী, জেলা ও উপ-জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, যুবরা, ও এনজিও প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রসঙ্গত: ’এডুকেশন ম্যাটারস: চ্যাম্পিয়নিং দ্য ট্রু ভ্যালু অব ইনভেস্টিং ইন এডুকেশন ফর এ স্ট্রংগার বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই জাতীয় কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। পোর্টিকাস-এর সহায়তায় ও ইউনেস্কো ঢাকার কারিগরি সহায়তায় জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি এটি বাস্তবায়ন করছে।