উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫/১১/২০২২ ১০:০৫ এএম

সাধারণ মানুষের দেওয়া ৪ কোটি টাকায় সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি স্থাপিত হয়েছে রাঙামাটির প্রত্যন্ত জুরাছড়ি উপজেলায়। সরকারি কোনো অনুদান ছাড়াই ১২৬ ফুট উঁচু মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশের বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি এখন দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠছে। আগামীকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে।

রাঙামাটির পাহাড়বেষ্টিত দুর্গম অঞ্চলের নাম জুরাছড়ি। যা ১৯৮৩ সালে থানায় উন্নীত করা হয়। নৌপথই হলো রাঙামাটি সদরের সঙ্গে জুরাছড়ির যোগাযোগের মাধ্যম। রাঙামাটি সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৭ কিলোমিটার। উপজেলা সদরের অদূরে সাড়ে ১২ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত জুরাছড়ির সুবলং শাখা বনবিহারটি। এই বিহারে ২০১২ সালে রাঙামাটি রাজ বনবিহারের প্রধান ও পরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবিরের (বনভান্তে) স্মৃতির উদ্দেশে সুবলং শাখা বনবিহার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজে এগিয়ে আসেন জুরাছড়ি উপজেলার ভিক্ষুসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে সম্পন্ন হয়। এর স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ূয়া, প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান ও দয়াল চন্দ্র চাকমা। প্রকৌশলী ছিলেন তৃপ্তি শংকর চাকমা ও অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিমলানন্দ স্থবির। স্থানীয় দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকা ও সাধারণ মানুষের দেওয়া টাকায় বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, সুবলং শাখা বনবিহারের প্রায় এক একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় বুদ্ধমূর্তিটি। গৌতম বুদ্ধের বিশালাকার এই মূর্তিতে চোখ ধাঁধানো নানা কারুকাজ করা হয়েছে। সামনে খোলা জায়গায় ফুল ও গাছপালা শোভা পাচ্ছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন মূর্তিটি দেখার জন্য। নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বিহারের আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

মূর্তিটি উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিহার পরিচালনা কমিটি। এর মধ্যে প্রথম দিন রয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রা, বুদ্ধমূর্তির জীবন্যাস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে রয়েছে ধর্মীয় আচার। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহারদুর উ শৈ শিংসহ দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে বিহার পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক স্মৃতিবিন্দু চাকমা জানান, বুদ্ধমূর্তিটির সুবাদে এখানের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। সুবলং শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধল কুমার চাকমা জানান, বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণে জুরাছড়ি উপজেলার হাজারো মানুষ দূর-দূরান্তের ঝিরি থেকে পাথর সংগ্রহ করেছেন এবং স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কাজে সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করা হয়নি। ধর্মপ্রাণ মানুষের দেওয়া অর্থেই কাজটি করা হয়েছে।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, এখানের বাসিন্দারা এটি নির্মাণে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ বিশিষ্টজন আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এটি দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত