উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩/১০/২০২২ ৯:৩৮ এএম

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ নাফ নদীর কূল ঘেঁষে টেকনাফ থানা চত্বরে অতি যত্নে সংরক্ষিত মাথিনের কূপ। আঠারো শতকের শেষ দিকে টেকনাফে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। সংকট সমাধানে মাত্র একটি সুপেয় পানির কূপ ছিল। তাও থানা প্রাঙ্গণে। কূপ থেকে রাখাইন তরুণীরা পালাক্রমে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয জল তুলতো।
থানার বড় বাবু পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য কলকাতা থেকে এই থানায় বদলি হয়ে আসেন। সবার সঙ্গে রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনও এখান থেকে জল নেয়ার জন্য আসতো। ঘটনাচক্রে ধীরাজের সঙ্গে মাথিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং দুজনে বিয়ে করার সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ধীরাজের বাবার অসুস্থতার খবর আসে। তাই ধীরাজ কলকাতায় ফিরে যেতে চান কিন্তু মাথিন তাকে যেতে বাধা দেয়।

মাথিনের মনে ভয় ছিল হয়তো ধীরাজ কলকাতা থেকে আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু ধীরাজ মাথিনকে না জানিয়ে কলকাতা চলে যান। ভালোবাসার প্রিয় মানুষটা চলে যাবার পর দীর্ঘ সময় প্রহর গুনতে গুনতে অনিদ্রা আর অনাহারে নিজের সুন্দর জীবনকে চিরতরে বিসর্জন দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন।

ধীরাজ ও মাথিনের প্রেমের নিদর্শনটিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সংরক্ষণ করে মাথিনের কূপ নামকরণ করেন। এই ঘটনার প্রায় ৮০ বছর পর ২০০৬ সালে টেকনাফ থানার কর্মকর্তা খালেদ হোসেন মাথিনের কূপ সংস্কার করেন। পর্যায়ক্রমে মাথিনের কূপ অমর প্রেমের নিদর্শন হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি লাভ করে।

যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে কক্সবাজার যেতে হবে সেখান থেকে টেকনাফ পৌঁছাতে হবে। টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত টেকনাফ থানা কম্পাউন্ড চত্বরে রয়েছে এই মাথিনের কূপ।

সড়ক, রেল কিংবা আকাশপথে কক্সবাজার এসে সেখান থেকে মাথিনের কূপ দেখতে যেতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে লোকাল বাসে, জিপ বা সিএনজিতে করে যেতে পারবেন টেকনাফ। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন:

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায় তাই টেকনাফ ভ্রমণে বেশিরভাগ ভ্রমণকারী কক্সবাজারের হোটেলে রাত্রিযাপন করেন। তবুও প্রয়োজনে টেকনাফ শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি মোটেল রয়েছে তার নাম নেটং। এছাড়া উন্নত মাঝারি মানের হোটেল আছে। আছে কয়েকটি রেষ্ট হাউসও। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফে থাকতে চাইলে রুমভেদে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হবে।

যা খেতে পারবেন:
নাফ নদী থেকে সদ্য তোলা তরতাজা রকমারি সুস্বাদু মাছ যেমন- ইলিশ, কোরাল, হরুল,বাটা, লইট্টা, চিরিম, পোপা ও গলদা চিংড়ি। এছাড়া খেতে পারবেন সাগরের রূপচাঁদা, গুইজ্জ্যা, টাইল্ল্যা, দাতিনা ও কৈ মাছ। তাছাড়া বিষ ও লবণ মুক্ত শুঁটকির স্বাদ নিতে পারবেন।

মাথিনের কূপ দেখতে গিয়ে আরো যা দেখতে পারেন তা হচ্ছে রাখাইন বার্মিজ মার্কেট টেকনাফ পৌর শহরে। মাত্র দুই কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে টেকনাফ স্থল বন্দর। যেখানে মায়ানমার থেকে আসছে আদা,পেয়াঁজ, আচার, রুই, কাতলা, রসুন, বড় বড় কাঠের টুকরো বোঝাই কার্গো ট্রলার। দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন এপার ওপারের সিএনএফ ব্যবসায়ীরা। পাশেই রয়েছে সুউচ্চ নেটং পাহাড়। সেখানে ভাগ্য ভালো থাকলে দিনের বেলায়ও দেখতে পাবেন হাতি চলাচলের দৃশ্য। নেটং পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়ালে দেখবেন বয়ে চলা নাফনদী। অর্ধেক মিয়ানমারের আর অর্ধেক বাংলাদেশের। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের সতর্ক প্রহরা। নিজের চোখে দেখতে পারবেন দুই দেশের জেলেরা নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে মাছ ধরায় ব্যস্ত। সেই দৃশ্য আর সৌন্দর্য আপনাকে দেবে নতুন অভিজ্ঞতা।

পাঠকের মতামত