উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
তদন্ত সংস্থাগুলোর দুর্বল তদন্তের সুযোগ নিয়ে খালাস পাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত দুই বছরে প্রায় শতাধিক দেশি ও বিদেশি মাদক ব্যবসায়ীকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ছাড়া পেয়ে ফের একই পেশায় যুক্ত হচ্ছে তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় একদিকে তারা এ পেশায় উৎসাহিত হচ্ছে, অপরদিকে বাড়ছে এ অপরাধীদের সংখ্যা। এ জন্য মূলত তদন্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রাপুর থানাধীন অনুগঞ্জ লেনের জলিল ইঞ্জিনিয়ারিং দোকানের সামনে থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই মো. আজিজুলকে একশ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যমতে, তিনি ওই ট্যাবলেট বিক্রির উদ্দেশ্যেই নিজের কাছে রাখেন। আটকের পর সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্র নিয়ন্ত্রণ আইন মামলা করেন সূত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম।
মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদশর্ক আ. জব্বার হাওলাদার ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলায় ছয়জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় আদালতে পাঁচজন সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য, বাকি দুইজন সাধারণ মানুষ। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরে ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুজ্জামান আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেন।
রাজধানীর উত্তরা থেকে ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৩ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার হন নাইজেরিয়ান ছয় নাগরিক। র্যাব-১ তাদের গ্রেফতার করে। এরা হলেন এমেকা, কসমস, চুকুমেকা স্যামুয়েল, ইকেনা, ম্যাক ও চিলি ইকেনা। র্যাবের ডিএডি মঞ্জুদার রহমান এদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। মামলার বিবরেণে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৫৪ নম্বর বাসার চতুর্থ তলায় মাদক ব্যবসায়ীরা বড় একটি মাদকের চালান এনে বেচাকেনা করছিলেন। সংবাদ পেয়ে অভিযান চালিয়ে র্যাব ২ কেজি ৭২০ গ্রাম হেরোইনসহ ছয় নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করে। এক মাস পর মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় আদালতে। রাসায়নিক পরীক্ষায় বলা হয়, সিলমোহর করা আলামত হালকা বাদামি গুঁড়া পদার্থের প্রতিটিতে হেরোইন পাওয়া গেছে। মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এ কারণে নতুন করে এখানে মামলা নম্বর দেওয়া হয়। নতুনভাবে দায়ে করা মামলা নম্বর ৮৮/২০১৪। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত বছরের ১৯ জুন আসামিদের বেকসুর খালাস দেন ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল।
এভাবে প্রতিনিয়ত কারাগারে আটক দেশি-বিদেশি ভয়ঙ্কর মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা একে একে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। কেউ মামলা থেকে খালাস হচ্ছেন। আবার কেউ জামিনে মুক্ত হচ্ছেন। চাঞ্চল্যকর মাদক মামলার আসামিরা এভাবে ছাড়া পেয়ে যাওয়া এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। কোনো না কোনোভাবেই এরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছেন। বেরিয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাদের পুরনো মাদক ব্যবসায়।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাদক ব্যবসায়ীদের আটকে না রাখার পেছনে তদন্ত সংস্থাগুলো দায়ী। মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, ডিবি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে কোনো সংস্থার তদন্তেই বড় ধরনের ফাঁক থেকে যায়। এছাড়া আলমত উদ্ধার ও জব্দ তালিকা তৈরির সময় অদক্ষতার পরিচয় দেন তদন্ত কর্মকর্তরা। আর সে সুযোগই নেয় অপরাধীরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে আসামিদের বের করে নিয়ে যেতে সমর্থ হন।
মামলার তদন্ত, সাক্ষ্য ও শুনানির ওপর ভিত্তি করেই যে কোনো মামলার রায় দেওয়া হয়। সেখানে তদন্তে যদি কোনো গাফিলতি থেকে যায়, বিচারে কিছু করার থাকে না।
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সাক্ষীরা আদালতে এসে যে সাক্ষ্য দেন তা অভিযোগপত্রের বিপরীত। আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় খালাস পাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এতে তদন্ত কর্মকর্তাদের কিছুটা অদক্ষতা রয়েছে।’
বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ঢালাওভাবে তদন্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতাকে দায়ী করা ঠিক না। মাদক মামলায় অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীর সাজা হয়েছে। তারা জেল খাটছে।
তবে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম মাদক ব্যবসায়ীদের সাজা না হওয়ার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাব আছে বলে স্বীকার করেন।
তিনি জানান, অনেক তদন্ত কর্মকর্তা যথেষ্ঠ পরিমাণে প্রশিক্ষিত নন। কনস্টেবল থেকে অনেকে তদন্ত কর্মকর্তা হয়েছেন। মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা প্রণয়ন ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের সময় করণীয় বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব আছে তাদের। এ জন্য তদন্ত কর্মকর্তাদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সুত্র: পরিবর্তন