প্রকাশিত: ১১/০৩/২০২১ ৯:১৩ এএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে তাতে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

ইরাবতীর ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গত ফেব্রুুয়ারির শেষদিক থেকে জান্তা সরকার বিক্ষোভকারীদের দমনে সহিংস দমনাভিযানের পথ বেছে নেওয়ার পর থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পদত্যাগের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে।

এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), পর্যটন পুলিশ এবং পুলিশের প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তারা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের দায়িত্ব ছেড়েছেন।

সবশেষ হিসাব অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমার পুলিশের বিভিন্ন শাখার পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা ও সদস্য অভ্যুত্থানবিরোধী অবস্থান নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে (সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স মুভমেন্ট) যোগ দেন। শুক্রবার যোগ দেন আরও শতাধিক পুলিশ।

রাজধানী নেপিদোর ওই পুলিশ কর্মকর্তা— যিনি নিজেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন— আরও জানিয়েছেন, পুলিশের বিশেষ শাখার মেজর তিন মিন তুন অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর থেকে সেটা পুলিশদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

মেজর তিন মিন তুন চলতি সপ্তাহে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সামরিক জান্তার অধীনে আমি আর দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছি না। তাই আমি সরকারি কর্মীদের সামরিক সরকারবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।’

ওই ফেসবুক পোস্টে মিয়ানমারের চলমান অভ্যুত্থানবিরোধী তরুণ বিক্ষোভকারীদের তিনি সম্মান জানান বলে লিখেছেন। মিয়ানমারে এখন যে জান্তাবিরোধী আন্দোলন চলছে তার নেতৃত্বে রয়েছে দেশটির তরুণ এই বিক্ষোভকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইরাবতীকে বলেছেন, যারা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। কমান্ডাররা শুধু সেসব পুলিশ সদস্য কাজে ফেরানোর কথা বলেছেন।

আন্দোলনে যোগ দেওয়া পুলিশরা বলছেন, তারা শুধু নির্বাচিত সরকারকে মেনে নিতে রাজি আছেন। তারা আরও বলেছেন, যদি সু চির দল এনএলডির নেতৃত্বে সামরিক সরকারবিরোধী লড়াইয়ের জন্য কোনো বাহিনী তৈরি করা হয় তাহলে তারা তাতে যোগ দেবেন।

অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়া ইয়াঙ্গুনের এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমি অনেক লোককে এমন সমস্যায় পড়তে দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না, যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। আমি জানি তিলের একটি বীজ তেল হয় না কিন্তু আমি না থাকায় সামরিক জান্তা সরকার তো অন্তত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হারিয়েছে।’

নেপিদোর ওই পুলিশ কর্মকর্তা ইরাবতীকে আরও জানিয়েছে, অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়া বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। আর কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছেন যে, তারা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।’

কিছু পদত্যাগপত্রে দেখা গেছে, দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে বলছেন, সামরিক জান্তা সরকারের দেওয়া কোনো নির্দেশ মেনে চলার ইচ্ছা তাদের নেই। তারা জনমানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে জান্তা সরকারের অমানবিক নির্দেশ পালনের মতো নৃশংস কাজ করতে চাননি বলে মিয়ানমারের বেশ কিছু পুলিশ সদস্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের মিয়ানমার সীমান্তলাগোয়া মিজোরাম রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে।

ভারতের আশ্রয় নেওয়া পুলিশ সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়ে রয়টার্সের বিশেষ এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেসব পুলিশকে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে ‘না মরা পর্যন্ত (বিক্ষোভকারীদের) গুলি করার নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছিল।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের খামপেট শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হাতে থাকা সাব মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পুলিশের ল্যান্স করপোরাল থা পেংকেকে; যিনি এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...