স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার জেরে কয়েকদিনের অবরোধ, মিছিল ও সহিংসতার পর খাগড়াছড়িতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শহরের প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে; মানুষের চলাচলও কম।
রবিবার সকাল থেকেই শহরের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শহরজুড়ে টহলও রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বেরোচ্ছেন তাদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে।
শনিবার উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলা ছাড়াও গুইমারা উপজেলাতেও ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
তবে সকাল থেকে জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতে সাজেকে আটকা প্রায় দুই হাজার পর্যটককে সেনা নিরাপত্তায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছে পার্বত্য এই জেলায়। মামলার পর বুধবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালন করেছে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’।
শনিবার ছিল জেলাজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ। এর ফলে গোটা জেলা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টান টান উত্তেজনা থাকলেও এদিন সকাল থেকে সড়ক অবরোধ চলাকালে মোটামুটি শান্তই ছিল খাগড়াছড়ি শহর। যদিও শহরের বিভিন্ন স্থানে পিকেটাররা ছিলেন। রাস্তায় টায়ার ও গাছের গুড়িয়ে আগুন দিয়ে তারা অবরোধ পালন করছিলেন।
দুপুরের পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ করেই উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তায় নারানখিলায় আন্দোলনকারী পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরই প্রভাব পড়ে গিয়ে মহাজনপাড়ায়।
দুপুর ২টা থেকে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় পক্ষের লোকজন সেখানে মুখোমুখি অবস্থান নেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বেশ কিছু মানুষ আহত হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ২৩ জনের মত আহত হয় বলে জেলা সিভিল সার্জন জানান। এই অবস্থার মধ্যে এক বার্তায় জানানো হয়, খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেছেন, বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান করা হলো। জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত এই ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে।