উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫/০১/২০২৩ ৯:৪৯ এএম , আপডেট: ০৫/০১/২০২৩ ৯:৫১ এএম
ফাইল ছবি

তিন দালালের হাত ধরেই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে পাসপোর্ট করে বৈধভাবে কিংবা সাগর পথে পাচার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। কক্সবাজারে পাসপোর্ট তৈরীতে কড়াকাড়ি হওয়ায় ভিন্ন জেলার অফিস থেকেই তৈরী করা হচ্ছে পাসপোর্ট। এছাড়া পাসপোর্ট বিহীনদের সাগর পথেই পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া এসব রোহিঙ্গারাই বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে। বিদেশে আসতে পারলেই এরা বাংলাদেশীদের শত্রু মনে করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত তিন দালাল চক্রের হাত ধরে বর্তমানে পাসপোর্ট তৈরি করছে রোহিঙ্গারা। তারা হলেন, কক্সবাজার জেলার পাহাড়তলীর ইসলামপুর গ্রামের মৌলভী নুর হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাত্তারঘোনা গ্রামের আবদুস ছবির ছেলে হাফেজ আহম্মেদ ও রামু থানার ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মিঠাইছড়ির নিজেরপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম। এদের মধ্যে মৌলভী নুর হোসেন ও হাফেজ আহম্মদ রোহিঙ্গা। অনেক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে বসতি গেড়ে পাসপোর্ট তৈরির কাজ করে আসছে তারা।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলাসহ নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে কাজ করছে হাফেজ আহম্মদ। তবে কক্সবাজারে প্রশাসনের নজরদারী বেশী হওয়ায় পাসপোর্ট তৈরীতে ভিন্ন জেলার দিকে ঝুঁকছেন এই দালাল চক্র। এছাড়াও অন্যান্য জেলায় পাসপোর্ট তৈরিতে কাজ করছেন নুর হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। এদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া
অনেক পুরনো রোহিঙ্গা।
খুরুস্কুল ডেইল পাড়ার বাসিন্দা সোলতান আহমদ জানিয়েছেন মূলত স্থানীয়দের একই নামের জন্ম সনদ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পাসপোর্ট। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এক মৌলভী এসে বললেন আপনার মেয়ের নাম ইয়াসমিন। আমার মেয়ের নামও ইয়াসমিন। এই নামেই একটি পাসপোর্ট করতে চাই, আপনাকে চাহিদামত টাকা দেওয়া হবে।
কাগজপত্র সব ঠিক থাকবে শুধুমাত্র ছবিটি ভিন্ন হবে। তদন্তে আসলে বলবেন সবঠিক আছে। এতে আমি রাজি হলেও তদন্তে আসলে আমি ফেঁসে যাই। পরে রোহিঙ্গা ইয়াসমিন কিভাবে বিদেশ গিয়েছে আমার জানা নেই।
সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে দালাল চক্র। টাকা দিলেই বিভিন্ন জেলা থেকে একই নামের বাংলাদেশি নাগরিকের পরিচয় ব্যবহার করে তুলে দেয়া হচ্ছে পাসপোর্ট। পুলিশ সূত্র জানায়, পাসপোর্ট দালাল চক্রের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ট সম্পর্ক অনেক বছর আগে বাংলাদেশে এসে নাগরিকত্ব পাওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে। ওইসব রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছে। ওইসব রোহিঙ্গাদের পরিচয় জাল করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে নতুন রোহিঙ্গারা। আর এই কাজে প্রধান ভুমিকা পালন করছে ওই ৩ দালাল। বাংলাদেশী ভোটার আইডি, জন্মসনদ থেকে শুরু পাসপোর্ট অফিসের যাবতীয় কাজ করে দেন তারা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই দালাল গ্রুপকে সহযোগীতা করে পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক আবু তৈয়ব জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের হাতে বিদেশে বাংলাদেশীরাই নির্যাতিত হচ্ছে। দেশে এদের সমাদর করে রাখলেও বিদেশে আসলে বাংলাদেশীদের এরা শত্রু মনে করে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে এসেছেন এরা সবাই এ ব্যাপারে অবগত। যেভাবেই হোক রোহিঙ্গাদের থামাতে হবে। এরা আর্ন্তজাতিকভাবে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ায় বিদেশে অনেকটা বেপরোয়া।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বহু বছর আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে ঘাটি গেড়েছে তারাই মূলত এ ধরণের রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত। তবে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনো ভাবেই যেন কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবলম্বন করা হচ্ছে। বহু বছর আগে এসে যারা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে গেছে তাদেরকেও পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...