উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮/০৯/২০২২ ৪:৪৫ পিএম , আপডেট: ১৮/০৯/২০২২ ৪:৫০ পিএম
ফাইল ছবি

বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন রাজ্যে গত কিছুদিন যাবৎ চলা অব্যাহত সংঘর্ষ এবং বাংলাদেশের ভেতরে মর্টার শেল পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা আহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি।

বিজিবির অপারেশন্স বিষয়ক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “স্থানীয় প্রশাসনকে বিজিবির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সীমান্তের ওই অংশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক যারা আছেন, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে, তাদেরকে অস্থায়ীভাবে নিরাপদ কোন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”

“তমব্রু এলাকায় বিজিবির পাঁচটি আউট পোষ্ট রয়েছে। মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সেখানে মোতায়েন বিজিবির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং গোয়েন্দা ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, মিয়ানমারের কোন নাগরিক যাতে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে পালিয়ে আসা বারো লাখের মত রোহিঙ্গা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের কক্সবাজারে বাস করছে। বান্দরবান সীমান্ত দিয়েও তারা প্রবেশ করেছে।

প্রশাসন যা বলছে
পরামর্শ অনুযায়ী স্থানীয়দের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে সেখানকার প্রশাসন। স্থানীয়দের নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ঘুমধুম থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, “বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিজিবিসহ সবাই মিলে আলোচনা করেছি। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বাস করছেন সেই পরিবারগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছে।”

তিনি জানিয়েছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, যেখানে দুবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া শেল পড়েছে। এর আশপাশে একই ইউনিয়নের বাইশফাড়ি এবং আমতলী এলাকাকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলে করা হচ্ছে।

সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, বান্দরবানের ওই অঞ্চলে পাহাড়ি ভূমিতে অধিবাসীর সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। কী ধরনের অস্থায়ী আশ্রয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে সেটি এখনো ঠিক করা হয়নি।

“অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে মানুষজন সাধারণত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র যেগুলো হয় সেখানে যেতে চায় না। কারণ সেখানে অনেক সুবিধা থাকে না। আগে তাদের কনভিন্স করতে হবে। কয়েকটা বিষয় ভাবা হচ্ছে, সেটা হতে পারে আত্মীয়দের বাড়ি, কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো।”

বাংলাদেশের ‘সর্বোচ্চ সংযম’
বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে মর্টারের শেল এসে পড়া এবং তাতে কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনায় আজ আবারও বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। এনিয়ে অগাস্ট মাস থেকে তাকে চারবার তলব করা হল।

স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর দেয়া হচ্ছে, রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

পরপর দুইবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা পড়ার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশকে এর চেয়ে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বলেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, শান্তিপূর্ণ ভাবে এ সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হলে প্রয়োজনে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা হবে।

ওদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে তার ব্রিটেন সফরে দেশটির বিরোধী দলের নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান স্যার কেয়ার স্টারমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি সশস্ত্র সংঘাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস খবর দিচ্ছে, “বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সংঘাতের উপচে পড়ার প্রভাব ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও, সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করছে”।

যা ঘটছে সীমান্তে
অগাস্ট মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীগুলোর লড়াই চলছে।

তখন থেকে বান্দরবানে সীমান্তের ওই অংশ থেকে প্রতিদিন গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে।

গত মাসের ২৮ তারিখ জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু উত্তর পাড়ার কাছে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে।

এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও সেখানে মর্টার শেল এসে পড়ে যার আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।

সেদিন ওই সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত একজন রোহিঙ্গা নিহতও হয়। এই ঘটনায় রবিবার ‘কড়া প্রতিবাদ’ও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

গত মাস থেকেই তমব্রু সীমান্তে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুত্র, বিবিসি

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ মিয়ানমার