করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় স্বল্পমূল্যের ওষুধ ডেক্সামেথাসনকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোভিড-১৯ থেকে জীবনরক্ষায় এমন সাফল্য অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়েসুস। এদিকে আস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা প্রায় এক বছরের জন্য এ ভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাস্কাল সরিওট। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন দেশ ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার খবর পাওয়া যায়, যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা সহজলভ্য ও সস্তা ওষুধ ডেক্সামেথাসন দিয়ে করোনা রোগীদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে সফল হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ওষুধটি ভেন্টিলেটরে যাওয়া এক-তৃতীয়াংশ রোগীর জীবন বাঁচিয়েছে। যাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার হয়েছে, তাদের মধ্যে এক-পঞ্চমাংশ রোগী বেঁচে ফিরেছেন। করোনার চিকিৎসায় এমন উপকারিতা এত দিন আর কোনো ওষুধে পাওয়া যায়নি-দাবি ওই গবেষকদের।
নতুন এ খবরকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ‘যেসব রোগীর অক্সিজেন কিংবা ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়, তাদের মৃত্যুহার কমানোর প্রথম ওষুধ হতে যাচ্ছে এটি। এটা দারুণ খবর।’ গেব্রিয়েসুস আরও বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্য সরকার, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং জীবনরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত এই সাফল্য অর্জনে অবদান রাখা বিভিন্ন হাসপাতাল ও রোগীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
ডেক্সামেথাসন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ। ১৯৬০ সাল থেকে এটি নানা ধরনের প্রদাহ এবং অ্যাজমা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ২ হাজার করোনা রোগীর শরীরে ডেক্সামেথাসন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছিলেন। প্রাপ্ত ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি ৪০ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে। আর যাদের অক্সিজেন নেওয়া দরকার, সেসব রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমেছে ২৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
এদিকে বেলজিয়ান রেডিও স্টেশনের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবিত করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যে শিগগিরই এর প্রথম পর্বের ট্রায়াল শেষ হবে। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
পাস্কেল সরিওট বলেন, আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বর নাগাদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল পাওয়া যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী অক্টোবর নাগাদ এই টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তার ভাষায়, ‘এটি বছরখানেক ধরে সুরক্ষা দেবে।’
আস্ট্রাজেনেকার এ টিকার ৪০ কোটি ডোজ প্রি-অর্ডার করতে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইউরোপের চার দেশÑ জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস।