খতিয়ান সৃজনের নামে টেকনাফের ভুমি অফিসে লোকজন প্রতিনিয়ত হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন। চাহিদা মতো হাদিয়া না দিলে শুনানীর নামে এখানে চলে পরিকল্পিত হয়রানি। লোকজন সময়মতো কাংখিত ভুমি সেবা পাচ্ছেন না বলে নিজেদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। সেবা প্রার্থীদের মতে, সেবার নামে তারা প্রতিনিয়িত ভোগান্তিতে পড়ছেন ঠিক। তবে এমন ভোগান্তি ও হয়রানি অতীতে টেকনাফ ভুমি অফিসে দেখেননি বলে তাদের দাবী। তবুও হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার লোকজন নিজেদের কাংখিত খতিয়ানটি পাবার আশায় নিরবে নিভৃত্বে সহ্য করে আসছেন বলে জানিয়েছেন। অনেকে,ভুমি অফিস থেকে কাংখিত সেবা যথাপোযুক্ত সময়ে না পাওয়ার জন্য অফিস ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন। তারা ভুমি সেবা ত্বরান্বিত করতে এবং টেকনাফের ভুমি অফিস থেকে হয়রানি এবং ভোগান্তির কবর রচনা করতে জেলা প্রাশাসকের কার্য্যকরী উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সচেতন মহলসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে,জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে টেকনাফের ভুমি অফিসের চিত্র ভিন্নরুপ ধারণ করেছে। ভুমি অফিসের সেই আগেকার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তারাও সীমান্তের ভুমি সেবার প্রধান অফিসটিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত পরিদর্শনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ভুমি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
সেবাপ্রার্থীদের দেওয়া তথ্যমতে,ইউনিয়ন ভুমি অফিস কর্তৃক প্রয়োজনীয় কার্য্যক্রম তথা খতিয়ান সৃজনে আবেদীত সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবপত্রের আলোকে প্রদত্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরও উপজেলা ভুমি অফিস তথা এসিল্যান্ড অফিসে কারণে অকারণে দীর্ঘ সময় ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে। সার্ভেয়ার এবং কানুনগোর কার্যক্রম শেষে পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি তথা নাজিরের টেবিলে গেলে ওই ফাইল এক ধরনের অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য হওয়া কাংখিত ফাইল নাজিরের টেবিল বক্সে দিনের পর দিন পড়ে থাকে। ওই ফাইল নিয়ে সে (নাজির লিটন) বিভিন্ন ধরণের ফন্দি ফিকির করেন বলে ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। নাজিরকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফাইলটি সচল করতে হয় বা এসিল্যান্ডের টেবিলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ভুমি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত নাজিরের (লিটন) ফাইল প্রতি মোটাংকের অর্থ আদায়ের বিষয়টি টেকনাফে সর্বস্বীকৃত। টেবিল পাল্টানোর নামে ভুমি অফিসে অর্থ আদায়ের বিষয়টিতে জনমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। লোকজন জানিয়েছেন,টেকনাফের ভুমি অফিসে আপনা-আপনি ফাইল চলেনা। ডেস্ক বা টেবিল পাল্টাতে এখানে নির্দিষ্ট অর্থ দিতে হয়। প্রদত্ত অর্থ না দিলে ওই ফাইল দিনের পর দিন ডেস্কে বা রেকে পড়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে নামে বেনামে ফাইল আটকে রাখার কথাও জানিয়েছেন কামাল সওদাগরসহ ভুক্তভোগী লোকজন। ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন, এখানকার অর্থ আদায়ের সর্বশেষ পন্থা হলো শুনানী। হামিদা বেগম নামের এক সেবাপ্রার্থী জানিয়েছেন,অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে শুনানীকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন ভুমি অফিসের লোকজন। তিনি (এই নারী সেবাপ্রার্থী) ঠুনকো অভিযোগের আলোকে নোটিশ না করে আগে অভিযোগকারীর বিষয়টি যথাযথ কিনা তা খতিয়ে দেখলে সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রার্থীরা হয়রানী থেকে বাঁচবেন।
প্রবাসী আবুল কালাম জানান,সিএনজি ভাড়া দিতে দিতে একেবারেই হয়রান হয়ে গেছি। এভাবেই ২/১দিন পর পর কি আর আসা যায়? এই অফিসে আসতে আসতে, আর মন চায়না যে আসবো। আসছি আর যাচ্ছি তবুও আমার কাজটা কেন জানি হচ্ছেনা এমন বিরক্ত এবং হতাশার কথা ব্যক্ত করে নিজের মনের কথা এ প্রতিবেদকের কাছে ব্যক্ত করেন ওই প্রবাসী সেবাপ্রার্থী।
উন্নয়নকর্মী ও সেবাপ্রার্থী এইচ এন আমান জানান,টাকা ছাড়া এখানে কিচ্ছুই হয়না। টাকা না দিলে এখানে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। শুনানীর নামে টেকনাফ এসিল্যান্ড অফিসে সেবাপ্রার্থীদের প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় জানিয়ে ভুক্তভোগী এই সেবাপ্রার্থী চরম অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। ছোট্ট একটি খতিয়ান সৃজন করতে গিয়ে তাকে ৩০হাজার টাকার উপরে গাড়ী ভাড়াও খরচ করতে হয়েছে মর্মে ভুমি অফিসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ভুক্তভোগী সেবা প্রার্থীদের অনেকে টেকনাফ ভুমি অফিসের “শুনানী” প্রক্রিয়াকে এক ধরণের ফাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সেবাপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা সাঈদ আলম জানান, শুনানীর নামে আমাকে দীর্ঘ ২বছর ধরে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি এখনো ওই সেবাপ্রার্থীর কাংখিত সমস্যাটি সমাধান করেনি ভুমি অফিস সংশ্লিষ্ট লোকজন।
জিয়াউর রহমান নামের এক প্রবাসী জানান,প্রপার ডকুমেন্ট সাবমিট এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেও অর্ধবছরের বেশী সময় লেগেছে একটি খতিয়ান নিতে। ওই প্রবাসী জানান, রাসেল নামের ভুমি অফিসের একজন লোক তাঁর কাছ থেকে মোটাংকের টাকা দাবী করায় তিনি এসিল্যান্ডকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে অনেকদিন পর খতিয়ান পেয়েছেন ঠিক। কিন্তু এখনো ওই খতিয়ানটি তামিল হয়েছে কিনা প্রাবসী জিয়ার সন্দেহ সংশয়ের কথা জানান। মুহাম্মদ আলী মুন্নাহ নামের এক ব্যাক্তি জানান, টেকনাফ ভুমি অফিসে শুনানিতে টাকা যে দিবে; রায়ও তার পক্ষে যাবে।
মুহাম্মদ হোছাইন নামের এক বয়োবৃদ্ধ জানিয়েছেন,জমির প্রয়োজনীয় কাগজাদি ও দখলসহ সবকিছু ঠিক থাকার পরও শুনানীর কথা বলে নোটিশ দিয়ে ডেকে এক ধরণের হয়রানি করা হয়। এই সেবাপ্রার্থী জানান, সরাসরি স্পটে না এসে দখল না দেখেই উচ্চ বাজেটের বিনিময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার রেওয়াজ থাকায় তিনি এক ধরণের শংকায় আছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
টেকনাফ ভুমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন কিচ্ছুই হয়না জানিয়ে টেকনাফ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জাতীয় দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক আলহাজ্ব মুহাম্মদ তাহের নাঈম বলেন,অফিসটি অনিয়ম এবং অব্যবস্থানার দিক দিয়ে অতীতের ইতিহাস ছাড়িয়ে গেছেন। এখানকার লোকজন শুনানীসহ নানান অজুহাত দেখিয়ে টাকা নিতে জানেন কিন্তু সৌজন্যতাবোধ বলতেই কিচ্ছুই জানেন না। হোয়াইক্যং মডেল ইউপির চেয়ারম্যান ও উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী জানান,ভুমি অফিসে দুর্নীতি রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে একই অফিসে কর্মের সুবাধে ভুমি অফিসের লোকজন সহজে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি ভুমি সেবা নিশ্চিতে দুর্নীতিমুক্ত ভুমি প্রশাসন গড়ার নিমিত্তে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে বদলীর দাবী জানিয়েছেন।
উপরোক্ত বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার (ভুমি) টেকনাফ, রাকিব হাসান চৌধুরীর মুঠোফানে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে বিষয়টি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সেবা প্রার্থীদের ভুমি সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেন জানিয়েছেন।##