টেকনাফের বিভিন্ন বাজার সমূহে প্রতিনিয়ত যানজটে জনজীবন অতীষ্ট হয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষ। যানজটের জন্য ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রধান সড়কের উপর যত্রতত্র গাড়ী পাকিং এবং বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাটকে দায়ী করছেন। সড়কের পার্শ্বস্থ অবৈধভাবে রাতারাতি গড়ে তোলা দোকানপাটের কারণে যানজট লেগেই থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রের দাবী। আর বাজার সমুহে নিত্য যানজটের কারণেই পথচারীসহ ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানাগেছে। যানজটের কবল থেকে বাঁচতে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে জাদীমুরা, মুচনী, লেদা ও হ্নীলা বাজারে উচ্ছেদ অভিযান জোরদারের দাবী জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে উল্লেখিত বাজারে উচ্ছেদ অভিযান জোরদারের জন্য ইতিমধ্যে সিএনজি পরিবহন শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লি: ও দোকান মালিকদের পক্ষ থেকে উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মার্কেট মালিক সংশ্লিষ্টরা জানায়, মার্কেটের সামনে প্রভাবশালীর ইন্ধনে রাতারাতি ঝুঁপড়ি তৈরী করে দোকানপাট বসে পড়ছেন। অন্যদিকে দোকান মালিকরা জানায়, আমরা বড্ড অসহায়। দোকানের সামনে প্রধান সড়কের পাশের খালি জায়গায় অবৈধভাবে দোকানপাট তৈরী করার কারণে আমাদের দোকান একেবারেই আড়ালে পড়ে যায়। আড়ালে পড়ার কারণে কাষ্টমার সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিতে পড়ছেন বলে দোকান মালিকদের অভিযোগ।
বাজার কমিটি এবং ইজারাদারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে দোকান মালিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তাদের মতে, বাজার কমিটি কার্য্যকর ভুমিকা রাখতে না পারায় কতিপয় প্রভাবশালীচক্র রাতারাতি মার্কেট ও সড়কের মাঝখানের খালি জায়গা তথা ফুটপাত দখল করে ঝুঁপড়ি ঘর তৈরীর মাধ্যমে অস্থায়ী দোকান গড়ে তুলছেন। এতে দোকান মালিকদের চরম ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারের খালি জায়গায় যত্রতত্র গড়ে উঠা ঝুঁপড়ি দোকান যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে জানাগেছে।
হ্নীলা ষ্টেশনস্থ শেখ আহমদ মুন্সি মার্কেটের মালিক দলিল লিখক জসিম উদ্দিন জানান,পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া আমাদের পারিবারিক একটা জমি আছে। ওই জমিতে এতদিন ধরে টিনের শেড দিয়ে তৈরী করা ছিলো। উক্ত টিনের তৈরী করা ছোট্ট মার্কেটটিতে লিল লিখকের কার্য্যলয় হিসেবে ব্যবসহার করে আসছি। কয়েক মাসে আগে আমাদের মার্কেটের সামনে বুলবুল আহমদ নামের এক ব্যাক্তি জোরপূর্বক চা ও পানের দোকান দিয়ে বসে পড়েন। মার্কেটের সামনে লম্বালম্বি করে বিশাল আকারের ছাউনির কারণে আমার প্রতিষ্ঠান দলিল লিখকের কার্য্যালয় আর খালি চোখে দেখা যায়না। চা ও পানের দোকানের কারণে দলিল লিখকের অফিসটি আড়ালে হওয়ায় ভুমি সেবা নিতে আসা লোকজন অনেকটা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে মার্কেটের সামনে বসে পড়া অস্থায়ী চায়ের দোকানী বুলবুলকে উঠে যেতে বললে সে উঠেনা। উল্টো সে হাকাবকা করেন বলে দলিল লিখক জসিমের অভিযোগ। এভাবেই জসিমের মতো হ্নীলা ষ্টেশনের অনেক অনেক দোকান এবং মার্কেটের মালিক অবৈধ দখলদারদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অবৈধ দখলদার চক্রটি রাতারাতি বাজারের খালি জায়গায় সড়ক ও মার্কেটের মধ্যবর্তী পড়ে থাকা খালি স্থানে ঝুঁপড়ি ঘর বেঁধে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন বলে দোকান মালিক ও মার্কেট সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। এদিকে সিএনজি ও অটো গাড়ীর চালকরা জানায়,সড়কের পাশের খালি জায়গাতে আমরা বছরের পর বছর পার্কিং করতাম। উক্ত খালি জায়গাতে অস্থায়ী দোকানপাট বসে পড়ায় কালের আর্বতে বাধ্য হয়ে সড়কের এক পাশে গাড়ী পার্কিং করতে হচ্ছে। যার কারণে সড়কে দীর্ঘসময় যানজট লেগে থাকে বলে তারাও মনে করেন। হ্নীলা সিএনজি পরিবহন শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি রশিদ আহমদ জানান, আসলে আমরাও চায় যানবাহনের কারণে কোন ধরণের যানজট সৃষ্টি না হোক। সড়কের উপর ও পার্শ্বস্থ খালি জায়গায় যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে উঠা যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। লেদা টাওয়ার এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে সিএনজির ব্যবহ্রত পার্কিং স্পটে সম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালীর সহযোগীতায় অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। বিষয়টি অভিযোগ আকারে ইউএনও মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এখনো কোন ধরণের সুরাহা পাওয়া যায়নি। লেদা টাওয়ার এলাকা ও হ্নীলা ষ্টেশনসহ সব বাজারে সিএনজি ও অটোর জন্য নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এই শ্রমিক নেতা।
লেদা রহমত উল্লাহ মার্কেকের সত্ত্বাধিকারী ও উপজেলা বিএনপি নেতা রহমত উল্লাহ জানান, প্রধান সড়ক ও মার্কেটের মধ্যবর্তী স্থানে কেন দোকানপাট বসবে? উক্ত খালি স্পটে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোন প্রকার দোকান বসানোর সুযোগ নেই। উল্লেখিত খালি স্পটে দোকান বসলে পার্কিংয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পার্কিং স্থান না থাকায় সড়কের উপর সিএনজি বা অটো পার্কিং করলেই এমনিতেই যানজট সৃষ্টি হবে জানিয়ে তিনি বাজারের সংশ্লিষ্ট মার্কেট সমুহে যত্রতত্র অস্থায়ী দোকান না বসানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
হ্নীলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জহির আহমদ জানান, মহাসড়কে সিএনজি এবং অটো এলোমেলোভাবে পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ষ্টেশনের উভয় পার্শ্বে পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দিলে যানজটমুক্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেছান উদ্দীন জানান, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজারে জনচলাচল নির্বিঘœ ও যানজটমুক্ত করণ এবং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বাজারের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের লোকদের আন্তরিক সহযোগীতার কথা জানান।##