নাফ নদীর সাথে সংযুক্ত কায়ুকখালী খালটি টেকনাফের প্রধান বানিজ্যিক খাল ও অন্যতম নৌ পথ। এই খাল দিয়েই সেন্টমার্টিন যাতায়াত ও এই খালকে কেন্দ্র করেই টেকনাফের মৎস্য আড়ৎ গুলো গড়ে উঠেছে। সাগরে মৎস্য আহরনকারী শত শত ট্রলার এই খালেই অবস্থান করে থাকে। এই খাল দিয়েই আসে মিয়ানমার হতে আমদানীকৃত বাঁশ।
শত বছর আগে এই খালটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এই টেকনাফ শহরটি। অথচ কয়েক বছর ধরেই এই গুরুত্বপুর্ন খালটি দখলে মেতে উঠেছে দুইপাশের জমি মালিক ও প্রভাবশালী মহল। দখলে দখলে খালটি অনেক জায়গায় নালায় পরিণত হয়েছে।
দখলের ফলে খালটি এতোই সংকোচিত হয়ে পড়েছে যে, প্রতি বর্ষায় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে প্লাবিত হয়ে পড়ে উজানের শত শত বাড়িঘর ফসলের মাঠ।
তাই অবিলম্বে কর্ণফুলী-বুড়িগঙ্গা নদীর মতো কায়ুকখালী খালের দুইপাশে গড়ে উঠা সবগুলো দখল উচ্ছেদে পরিবেশ সংগঠন ও নদী রক্ষা কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবী করেছে পরিবেশবাদী সচেতন মহল।
স¤প্রতি হাইকোর্ট নদী-খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। এতে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে নদী দখলকারীদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেন। নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সেজন্য আইন সংশোধন করে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সরকারকে। পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরি এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের রায়ে। কিন্তু ঐতিহাসিক এই রায়ের পরও টনক নড়েনি টেকনাফের প্রশাসন ও ভূমিদস্যূ সিন্ডিকেটের।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সম্প্রতি টেকনাফ কায়ুকখালী খাল দখলকারী হিসাবে ২৫ জনের নাম তালিকাভুক্ত করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। কিন্তু খাল উদ্ধার ও সেসব দখলদারদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই।
দখল প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ না থাকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পয়েন্টে খালের জমি দখলে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী মহল। সম্প্রতি পৌরসভার ময়লা ফেলে কায়ুকখালী খালের মোহনা দখলে মেতে উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল। তাছাড়া প্রধান সড়কের পাশে অলিয়াবাদ ব্রীজ সংলগ্ন খালের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় নিত্য নতুন দখলের মহোৎসব চলছে।
এর আগে গত বছরের ফেব্রæয়ারীতে ভূমি প্রশাসন দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে কায়ুকখালী খালের উপর নির্মিত নতুন ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছিলেন।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান আমার জানামতে খাল দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে ভ‚মি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।