

টেকনাফের কচ্ছপিয়া উপকুলের বঙ্গোপসাগর দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বঙ্গোপসারের ওই সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে মানবপাচার হয়ে আসছে। মানবপাচারকারীরা টেকনাফের বঙ্গোপসাগরের কচ্ছপিয়া উপকুলকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। গত ২দিনের যৌথ অভিযানে ওই রুটের চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। ওই রুটের দালালচক্র অনেকটা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। তবে যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখে মানবপাচারকারী চক্রের দালালদের শিকড় উপড়ে ফেলার দাবী জানিয়েছেন টেকনাফের মানুষ।
কচ্ছপিয়া এলাকার বেশ কয়েকজন লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়,মানবপাচারে জড়িত দালালরা কচ্ছপিয়া এবং রাজারছড়া এলাকায় পাহাড়ে তাদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। উল্লেখিত এলাকার দুর্গম পাহাড়ে তারা ছোট ছোট ঘর বেঁধেছেন। ঘরগুলো তৈরীতে তারা সবুজ পাতার সদৃশ জিনিসপত্র ব্যবহার করেছেন। যাতে দূর থেকে চিহ্নিত করা না যায়। স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন,মানবপাচারে জড়িত দালালচক্র পাহাড়েই সময় কাটান। আস্তনায় থেকে তারা দিন ও রাত অতিবাহিত করেন।
প্রশাসনিক অভিযানে উদ্ধার হয়ে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, কয়েকটি দলে বিভক্ত পাচারকারী চক্র। কেউ আছেন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায়। কেউ আছেন মার্কেটিংয়ে। কেউ আছেন বন্দিদের নিরপত্তায়। আবার কেউ কেউ দালালদের একক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।
মানবপাচারে জড়িত এক শীর্ষ দালাল এই প্রতিবেদককে জানান, আমাদের টার্গেট কেবল রোহিঙ্গা। আমরা শুধু রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পাঠায়। মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের স্ত্রী এবং স্বজনদের পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কাউকে জোর করে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়না। স্বেচ্ছায় ও অলিখিত চুক্তির আওতায় আসলে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে কেবল তাদেরকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
জানাগেছে, বিভিন্ন সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী কচ্ছপিয়া উপকুলের দুর্গম পাহাড়ে পাচারকারীদের আস্তনায় অভিযান পরিচালনা করেন। ২১সেপ্টম্বর (রোববার) যৌথ অভিযানে নারী শিশুসহ ৮৪জন মালয়েশিয়াগামী ভিকটিম উদ্ধার করা হয়। এসময় মানবপচারকারীদের আস্তনা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ কচ্ছপিয়া এলাকার আব্দুল্লাহ, রাজারছড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম ও মো: ইব্রাহীমসহ ৩মানবপাচারকারীকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এর আগে ১৮সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) নৌ বাহিনী ও কোষ্টগার্ডের যৌথ অভিযানে কচ্ছপিয়া পাহাড়ের চুড়া থেকে নারী ও শিশুসহ ৬৬জন ভিকটিম উদ্ধার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,উপকুলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া এলাকার শুধু কচ্ছপিয়াতেই অন্তত ৪০জন মানবপাচারের সক্রিয় দালাল রয়েছেন। এদিকে দালাল কেফায়ত উল্লাহ ও আব্দু করিম বেশ কয়েকটি মানবপাচার মামলায় কারান্তরীন আছেন। তবে বাহারছড়া ৮নং ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকার বাদশা মিয়া ও খুরশিদা বেগমের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৭) ওরফে জসিম সওদাগর, তার মামা মৃত ছৈয়দ আলী ও আশেক বানুর ছেলে আব্দুর রকিম(৩৮), মৃত আব্দুর রশিদ ও ছৈয়দুন্নিসার ছেলে স্থানীয় মহিলা মেম্বার খালেদা বেগমের স্বামী আব্দুল গফুর (৩২) সহ ওই এলাকায় ৩ডজনের বেশী দালাল সক্রিয়া রয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে লোক এনে পাহাড়ের চুড়ায় রেখে মালয়েশিয়ায় পাচার করেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, আগষ্ট মাসের শুরু থেকে জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাগরপথ দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করা হয়। চলতি সপ্তাহে প্রশাসনিক কঠোরতার কারণে কচ্ছপিয়া সীমান্তের মানবপাচারকারীরা রুট পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কচ্ছপিয়া সীমান্ত দিয়ে সাগরপথে মানবপাচার ঠেকিয়ে দিতে পাচারে জড়িত ওই সীমান্তে সক্রিয় অর্ধশত দালাল চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
জানতে চাইলে টেকনাফস্থ ২বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল আশিকুর রহমান বলেন, কচ্ছপিয়া ও রাজারছড়া উপকুলের দুর্গম পাহাড়ে পৃথক যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে দেড়’শ ভিকটিক উদ্ধারের পাশাপাশি দালাল চক্রের সদস্য এবং অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মানবপাচার বন্ধ করতে যা যা করা দরকার। তার সবই করা হবে জানিয়ে, বিজিবির এই কমান্ডিং অফিসার আরো বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় মানবপাচার বন্ধে দালালদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে।##
পাঠকের মতামত